নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা নিয়ে চরম উত্তেজনার মধ্যে দলটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ্রের সাথে সাক্ষাত করেছেন। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের সাথে সাক্ষাত করে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তারা কী কেন্দ্রে নালিশ দিয়েছে কিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ভাইয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালা দেওয়া ও কমিটির বিষয়ে কোন কথা হয়নি। তিনি একটু ব্যস্ত ছিলেন, একারণে এ বিষয়ে কথা হয়নি।
জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেলে এক সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সাথে আনোয়ার হোসেনের তীব্র সমালোচনা করেন। ওই সভায় বক্তব্যের এক অংশে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র আইভী বলেন, ‘ আনোয়ার কাকা (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি) প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়ে এই কমিটি দিয়েছেন। তিনি দেওভোগকে বুঝিয়েছেন, উনি যা চাইবেন তা হবে এখানে। যেই দেওভোগে পূর্বপুরুষেরা নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগের, তাদের অসম্মানিত করেছনে তিনি। আজকে এখানে দাঁড়িয়ে দেওভোগের মানুষ হিসেবে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম আমি।’
ওই দিন রাতে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাব্বির আলম সাগরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে এবং তাকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয়। এরপর থেকে পুরো জেলায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে।
এই ঘটনার দুই দিন পর সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে এক সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, পার্টি অফিসে তালা দেওয়ার বিষয়টা আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে কেউ তালা দেওয়ার বিষয়টি ভালো চোখে দেখবেনা। তাদের ক্ষোভ থাকতে পারে; কিন্তু আওয়ামী লীগ অফিস শুধু আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অফিস নয়, আওয়ামী লীগ অফিস হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষের সকল মানুষের অফিস। তাই তালা দেওয়ার দরকার নাই। আমরা বসে এ বিষয়ের সমাধান করবো। তিনি সবাইকে মিলেমিশে থাকার অনুরোধ করেন।
ওই দিন সন্ধ্যায় শীর্ষ দুই নেতা (নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর) অনুরোধে পদবঞ্চিত নেতারা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের তালা খুলে দেয়। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকর্মীরা পদবঞ্চিতদের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির মৃধা বলেন, এমপি শামীম ওসমান বলেছেন কমিটির বিষয়টি দেখবেন। যদি এ বিষয়ের কোন সুরাহা না হয়, তবে কেন্দ্রীয় কমিটিকে নালিশ করা হবে। রাজাকারপুত্র, হাইব্রিডদের কমিটিতে রাখতে কেন্দ্র কখনো বলেনি। এখন আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে তাঁকিয়ে আছি।
এই নেতা আরও বলেন, তারা কী কেন্দ্রে নালিশ করেছেন। এ বিষয়ে কেউ আমাদের কিছু বলেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলীয় কার্যালয়ে তালা দেওয়ার বিষয়ে দুই শীর্ষ নেতা হয়তো নালিশ করতে গিয়েছে নয়তো এ বিষয়টি জানাতে গিয়েছেন। এছাড়া কোন উদ্দেশ্য নেই। এই উত্তেজনার মধ্যে হঠাৎ করে তারা কেন কেন্দ্রীয় নেতার কাছে গিয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।