গ্যাস সংকটে কোন আলোর মুখ দেখা যাচ্ছেনা। তার উপর শুক্রবার সকাল থেকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনালে কারিগরি ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
নারায়নগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় শীতের কারণে গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করছে। এদিকে বাসা বাড়ীতে গ্যাস না থাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে। তারা গ্যাস নিয়ে এভাবে লুকোচুরী না করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস বন্ধ ঘোষনা এবং বিল দেয়া বন্ধ করার ঘোষনা করারও দাবি করছেন কেউ কেউ।
গ্যাস সংকটে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়ে নেক্সাস টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর আমিন আল রশিদ ফেসবুকে লিখেছেন, গ্যাস কি সব শীতে জমাট বেঁধে গেছে? ভোর ৬টায়ও যদি গ্যাস না থাকে এবং সারা দিনই যদি বিকল্প উপায়ে খেতে হয়, তাহলে প্রতি মাসে গ্যাসের বিল বাবদ ১০৮০ টাকা কেন দেব? টাকাও নেবেন, সেবাও দেবেন না তা তো হয় না। গ্যাস দিতে না পারলে বিল নেওয়া বন্ধ করেন।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ভোর থেকে গ্যাস নেই। দুপুরে আমরা কী খেয়েছি কিংবা কীভাবে খেয়েছি, সেটা না হয় না-ই জানলেন। এখন তো সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। এখনো গ্যাস আসবে না? নাকি ভোট শেষ তো গ্যাস শেষ?’
গত সাড়ে তিন বছরে দেশে যখন গ্যাস সরবরাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে, তখন শুধু বাসাবাড়িতেই নয়, শিল্প-কারখানা ও অন্যান্য খাত সংকটে ধুঁকছে।
গ্যাসের অভাবে অনেক বাসাবাড়িতেই ঠিকমতো চুলা জ্বলে না। বেশিরভাগ এলাকায় দিনের বেলায় গ্যাস থাকে না। আসে গভীর রাতে। আবার চাপও কম। গ্যাস না পেলেও গ্যাসের নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সেই সঙ্গে এলপিজি সিলিন্ডার কিংবা অন্য উপায়ে রান্নার জন্য বাড়তি ব্যয়ও করতে হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাসাবাড়িতে ফের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। তারা দুই চুলার গ্রাহকদের জন্য ৫১২ এবং এক চুলার গ্রাহকদের ৩৯০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে কারিগরি কমিটি গঠন করেছে কমিশন। এ কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের সপক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সাত কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিতে দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থাকে সোমবার চিঠি দিয়েছে ওই কমিটি।
জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সহসা এ সংকট থেকে রেহাই মিলবে না। তবে মার্চের পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।
চলমান এই সংকট নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে একটি সংকট রয়েছে, তবে এটা সাময়িক। গভীর সমুদ্রে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সংস্কার কাজে হাত দেওয়ার কারণে এখন গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা কম। আমরা চাই আগামী মার্চে রোজা শুরুর সময়ে গ্যাস এবং বিদ্যুতের সরবরাহ যেন স্বাভাবিক রাখা যায়। মার্চের আগেই এলএনজি টার্মিনাল দুটি পুরোপুরি সচল হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। আশা করছি দুই বছরের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট যোগ করা যাবে। এলএনজি আমদানিও বাড়বে। ২০২৬ এর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়ার টার্গেট রয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমদানির গ্যাসের অবস্থাটা খুব বেশি বড় করতে চাই না। আমাদের আমদানির গ্যাস থাকবে। মাঝখানে যে গ্যাপটা থাকবে, সেই গ্যাপটা আমদানির গ্যাস দিয়ে আমরা পূরণ করতে চাই।’
নির্বাচনের পর এখন গ্যাস সংকট আলোচনায় উঠে এসেছে। ফেসবুকেও তার রেশ দেখা যাচ্ছে। গ্যাস না পেয়ে সাধারণ মানুষ এখন নানাভাবে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
শামসুজ্জামান খান নামে এক ব্যক্তি নিজের ফেসবুকে গ্যাস সংকট নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তাতে লেখা ‘শীতের সময় গ্যাস সংকট!! দিনে চুলা জ¦লে না আর রাতেও আছে কি নেই বোঝা দায়, সিএনজি পাম্পে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। মনে হচ্ছে কর্তাব্যক্তিরা এখনো সব রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতেছেন। ভাই আপনাগো নির্বাচন তো শেষ এবার আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের একটু মুক্তি দেন।’
পূর্ব মাসদাইর এলাকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ভয়াবহ গ্যাস সংকট চলছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দা রোমান। তার ভাষায় ‘সারা দিনের কথা না হয় বাদই দিলাম, রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে কিছুটা গ্যাস চুলায় আসলেও ফজরের আজানের আগে বা তার কিছু সময় পরই তা চলে যায়, ফলে কোন বেলার খাবার কোন বেলায় খাই তা আপনাকে বলা বড় মুশকিল।’