নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ইটের দাম বেড়েছে প্রতি হাজারে ১ হাজার টাকা। হঠাৎ করে এই দাম বৃদ্ধির কারন অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয় কয়েকটি সংস্থাকে মোটা অংকের টাকা দিতে হচ্ছে এই অযুহাতে অতিরিক্ত টাকা তুলতেই গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে ইটের দাম।
সদর উপজেলার বক্তাবলী ও এনায়েতনগর ইউনিয়ন এলাকার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
চলতি মৌসুমের শুরু থেকে প্রতিটি ১ নম্বর ইট বিক্রি হয়েছে ১১ টাকা দরে। ১৪ জানুয়ারী থেকে মাত্র ১ দিনের ব্যবধানে সেই ইট বেড়ে ১২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে স্থানীয় কয়েকটি দপ্তরকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরছেন ক্রেতাদের কাছে।
জানা গেছে, বেশিরভাগ ইটভাটা সনাতন পদ্ধতিতে পরিচালিত হওয়ায় পরিবেশ দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তাই সনাতন পদ্ধতি পরিবর্তন করে পরিবেশবান্ধব নতুন জিগজাগ পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোসহ ইটভাটা পরিচালনা করতে সরকার ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। অন্যথায় দূষণকারী কোন ইটভাটা পরিচালনা করতে দেয়া হবে না বলে কঠোর নির্দেশনাও আরোপ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে যৌথভাবে কাজ করছে নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইটভাটার মালিক ও ম্যানেজার জানান, সম্প্রতি জেলার কয়েকটি সরকারী দপ্তরকে দেয়ার কথা বলে সদর উপজেলার প্রতিটি ইটভাটা থেকে ৬ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। ১৩ জানুয়ারি আরও একটি দপ্তরের জন্য প্রতিটি ইট ভাটা থেকে আরও ৩ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। ফলে ১৪ জানুয়ারি থেকে প্রতিটি ইটে এক টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
ইট উৎপাদনে মাটির প্রয়োজন হয়। ইটভাটার এসকল মাটি ফরিদপুর, শরিয়তপুর কিংবা বরিশাল থেকে নদীপথে বক্তাবলী এসে পৌঁছায়। প্রতি ফিট মাটির জন্য বিআইডব্লিউটিএ‘কে ২৫ পয়সা করে দিতে হয় বলে জানিয়েছেন বক্তাবলী-এনায়েতনগর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী চেয়ারম্যান। তবে, অন্যান্য দপ্তরের জন্য টাকা আদায়ের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে জালকুড়ি এলাকা থেকে ইট কিনতে আসা জিয়াউর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জের খোলাগুলো ইট উৎপাদন করছে, সাথে চাঁদা দিতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচের সাথে চাঁদার ব্যয়ের কারণে ইটের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই টাকা ইটভাটার মালিকরা ক্রেতার কাছ থেকেই তুলে নিচ্ছে। অসহায় ক্রেতা অনেকটা বাধ্য হয়েই দিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা।
এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর উপ পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবু বৈদ্য লাল বলেন, ইট ভাটার অনুমোদনগুলো বন্দর বিভাগ দিয়ে থাকে। আমরা শুধু নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগ নিয়ে দায়িত্ব পালন করি। এবিষয়ে তারা ভালো বলতে পারবে। ইট ভাটার মাটি পরিবহনে ফিট প্রতি ২৫ পয়সা করে নেয়ার বিষয়টিকে তিনি হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন।
এব্যাপারে জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সেলিমুজ্জামান বলেন, নারায়ণগঞ্জে যেকটি ইটভাটা রয়েছে তার অধিকাংশই অবৈধ। তাছাড়া ইট উৎপাদনের তারা বড় ধরনের লুকোচুরির আশ্রয় নিয়ে আকারে ছোট করে ফেলেছে। হঠাৎ করে ইটের দাম বাড়ানোর বিষয়টি এইমাত্র শুনলাম। এব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর উদ্দিন জানান, অধিকাংশ ইটভাটা অবৈধ ভাবে চলছে, এ সব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য কেউ যদি উৎকোচ নিয়ে থাকে, তাহলে সেই উৎকচের প্রভাব পড়ছে ক্রেতার উপর পড়াটা স্বাভাবিক। তার বাস্তব উদহারণ এই ইটের মূল্য বৃদ্ধি। প্রশাসনের সকলেই কিন্তু খারাপ নয়, আমরা আশা করবো প্রশাসন এই বিষয় গুলোতে হস্তক্ষেপ করবে।