নারায়ণগঞ্জে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে একের পর এক আটকে যাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। এর মধ্যে স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলররা বেশি রয়েছে। সাথে রয়েছে জনপ্রতিনিধিদের স্বজন ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ জানুয়ারী বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিনের বিরুদ্ধে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুদক। একই সাথে আসামী করা হয়েছে ইউনিয়নের সাবেক সচিব ইউসুফ ও বর্তমান সচিব শামীম মিয়াকে।
এর আগে ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ধামগড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান জেলা পরিষদের সদস্য মাসুম আহাম্মেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দু’টি ইটভাটার মালিকানা অর্জন এবং গভীর নলকূপ দেয়ার নামে জনসাধারণের নিকট থেকে টাকা আদায় সম্পর্কে। এই বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে তাকে নোটিশ ও কার্যালয়ে তলব করলে তার জবাব দেননি তিনি। সরকারি কাজে বাধা ও কমিশনকে অবজ্ঞা করায় মামলা দায়ের করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জাহেদ আলীর বিরুদ্ধে ২০ কোটি ১২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১৯ কোটি টাকার তথ্য গোপন করায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি ও এনসিসির কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। একই বছরের ডিসেম্বরে চার্জশিট প্রদান করে দুদক। সেই মামলায় চলতি বছরের জুনে আদালত থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয় হাজিরা না দেয়ার কারণে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর চাপে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে এলাকা থেকে সরে যান তিনি। বেশ কিছুদিন কক্সবাজারেও অবস্থান করেন। অথচ ওয়ারেন্ট জারি হওয়ার তিন মাস পর্যন্ত থানা পুলিশ কিছুই জানে না বলে গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়ে আসছিল।
পাশাপাশি বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন, মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা করে দুদক। ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর দেলোয়ার প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১। অবৈধ সম্পদ অর্জন, নামে-বেনামে জ্ঞাত বহির্ভূত আয়, মানি লন্ডারিংয়ের বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে নেমে প্রাথমিক সত্যতাও পায় সংস্থাটি। পরে প্রায় দুই বছর দীর্ঘ তদন্ত শেষে এই মামলার চার্জশিট দেয় দুদক।
একের পর এক জনপ্রতিনিধিদের দুদকের মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিব্রত স্থানীয় সরকরের অন্য প্রতিনিধিরা।