প্রয়াত ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক স্বাধীনতা পদকে ভূষিত (মরণোত্তর) এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জননেতা এ কে এম সামসুজ্জোহার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) প্রয়াত এই জননেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় চাষাড়া হীর মহলস্থ বাসভবনে পবিত্র কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে থেকে মিলাদ ও দোয়ায় অংশগ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও দিনটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
জানা গেছে, প্রয়াত সামসুজ্জোহা একাধারে গণপরিষদ সদস্য ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদের সদস্য ছিলেন। তাঁর বাবা মরহুম খান সাহেব ওসমান আলীও ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সাবেক এমএলএ।
ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের আদি নিবাস নারায়ণগঞ্জের ‘বায়তুল আমান ভবন’ আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করা হয়েছিল।
বাংলার মুক্তিসংগ্রাম তথা স্বাধীনতাযুদ্ধের সনদ ছয় দফা আন্দোলনের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাসের সাথে প্রয়াত সামসুজ্জোহার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ১৯৬৬ সালের ৮ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারায়ণগঞ্জ বালুর মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় ছয় দফার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই জনসভার সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রয়াত এ কে এম সামসুজ্জোহা। ওই দিন ছয় দফার প্রতীক হিসেবে ছয়টি কবুতর উড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পাঁচটি মশাল জ্বেলে মুক্তিসংগ্রামের শপথ নেন নেতাকর্মীরা।
ওই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রয়াত সামসুজ্জোহা সর্বপ্রথম হাইকোর্টে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে বিজয়ের বার্তা প্রচার করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। অপরাহ্ণে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা, বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পাক সেনাদের হাতে আটক বঙ্গবন্ধু পরিবারকে মুক্ত করতে গিয়ে পাক সেনা কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হন। মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় প্রয়াত সামসুজ্জোহাকে ২০১২ সালে স্বাধীনতা পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।
প্রয়াত শামসুজ্জোহার সহধর্মিণী ও রত্নগর্ভা প্রয়াত নাগিনা জোহাও ছিলেন ভাষাসৈনিক। তিনি ২০১৬ সালের ৭ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। প্রয়াত সামসুজ্জোহার ছেলে প্রয়াত নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টি থেকে একাধিকবার এমপি হয়েছেন, মেজো ছেলে বিএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি ও ছোট ছেলে এ কে এম শামীম ওসমান একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।