রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে অবৈধ মজুতদারের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছেিআইন-শৃংখলা বাহিনী। অবৈধভাবে মজুতে সংশ্লিষ্টতা মিললেই বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে পুলিশ-র্যাব। গাড়িতে যারা চাঁদাবাজি করেন তাদের বিরুদ্ধেও এরই মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। ভোগ্যপণ্য লুকিয়ে রেখে যারা দাম বাড়ায় তাদের গণধোলাই দেওয়া দরকার- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মন্তব্যের পর সক্রিয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়েছে সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল। মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে তৎপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পাঁচ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সমন্বিত বৈঠক করেছে। বাণিজ্য, অর্থ, খাদ্য, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে অংশ নেন।
নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট ও অবৈধ মজুতদার রয়েছে, তা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে আসছে সব মন্ত্রণালয়ই। কিন্তু সিন্ডিকেট সদস্য ও অবৈধ মজুতদারদের কিছু কিছু নাম মন্ত্রণালয়গুলোর হাতে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর্যাপ্ত তথ্য নেই। এবার এই সিন্ডিকেট সদস্য ও অবৈধ মজুতদারদের সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণসহ শনাক্ত করতে চায় সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অবৈধ মজুত ও স্বাভাবিক মূল্য রাখার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অনুষ্ঠিত অপরাধ পর্যালোচনা সভায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। রোজা শুরুর আগেই যাতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সেজন্য নজরদারি জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পণ্য সরবরাহ চেনের ওপর নজর রাখা হবে- পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর
সচিবদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকেও আলোচনায় এসেছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য শীর্ষ আমলাদের নির্দেশনা এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও আসন্ন রমজানে যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। র্যাব এরই মধ্যে মজুতদার এবং দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, যারা সৎভাবে ব্যবসা করবে, তাদের সব ধরনের সহায়তা করা হবে। তবে যারা মজুতদারি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে সরকার একটুও পিছপা হবে না।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের ভয়-ভীতি দেখানো সরকারের উদ্দেশ্য না। আমরা সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই। সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি হলে সবার সঙ্গে কথা বলে তা সমাধান করা হবে। তবে কেউ মজুতদারি করলে সরকার কঠোর হতে পিছপা হবে না। ডিলাররাও (সরবরাহকারী) যাতে জবাবদিহির আওতায় আসে, সেজন্য প্রতিবছর তাদের নিয়োগ নবায়ন করা হবে।
অবৈধভাবে চাল মজুত করলে মজুতদারদের জরিমানা অথবা মামলা দিয়ে জেলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেন, তারা যে দলের, যার আত্মীয়ই হোক না কেন কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে চালের দাম বাড়িয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন মাঠে কাজ করছে। সারাদেশে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে, থাকবে। কেউ চালের দাম বাড়ালে সেটা বরদাশত করা হবে না।
চালের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীদের চালের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তিই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
কার ঘরে বা দোকানে কত মজুত রয়েছে কিংবা কোন জায়গা থেকে কত যাচ্ছে এগুলো নজরদারির মধ্যে আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব পণ্য পরিবহন হয়ে শহরাঞ্চলে আসে সেগুলো যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকে সেজন্য সহয়তা চাওয়া হয়েছে।- বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু
মজুতদার ও সিন্ডিকেটকে বিএনপি মদত দিচ্ছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সিন্ডিকেট লালন-পালন করছে, মজুতদারদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে- একথা বললে কি ভুল হবে? যারা করছে তারা বিএনপির পুরোনো সিন্ডিকেট। বিএনপি সরকার ছিল ব্যবসায়ী সরকার। আওয়ামী লীগ ব্যবসা করতে আসেনি।
মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারণী সভার সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের সব ইউনিটকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নে অবৈধ মজুত রয়েছে এমন গুদাম শনাক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারা অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে অস্বাভাবিকভাবে মূল্য বাড়াচ্ছে, তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান চালানো হবে।