আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ-জাপা ও স্বতন্ত্র সহ ১৩ টি দলের ৩৪টি প্রার্থী নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছে। তবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্যান্য রাজনীতিক দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় সেভাবে দেখা যাচ্ছেনা। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হয়ে সক্রিয় রয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূইয়া। এছাড়া বাকি প্রার্থীরা একেবারে নিরব ভূমিকা পালন করছেন, নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছেনা।
জেলার মোট ৫টি আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) ও নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে সবচেয়ে বেশি হাড্ডাহাড্ডি লাড়াই হবে। কারণ এই দুটি আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি সহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হেভিওয়েটরা মাঠে রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-১ রূপগঞ্জ (আসনে) ত্রিমুখি লড়াই দেখা দিয়েছে। এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূইয়া, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার নির্বাচনী মাঠ চড়ে বেড়াচ্ছেন। এমনকি কর্মী ও সমর্থকদের উপরে হামলা সহ নানা অভিযোগ তোলা হচ্ছে এই আসনে। এছাড়া এই আসনে মন্ত্রী গাজীর ছেলে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গাজী গোলাম মোর্তজা নির্বাচনী মাঠে থাকলেও নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। তাছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম নির্বাচনী মাঠে থাকলেও এখনো সেখানে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন নি।
এই আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, তৃণমূল বিএনপি থেকে দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ পেয়েছেন দলটির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার, স্বতন্ত্র হিসেবে কেটলি প্রতীক পেয়েছেন শাহাজাহান ভূঁইয়া, স্বতন্ত্র হিসেবে ঈগল প্রতীক পেয়েছেন গাজী গোলাম মর্তুজা, স্বতন্ত্র হিসেবে আলমিরা প্রতীক পেয়েছেন হাবিবুর রহমান, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীক পেয়েছেন মো. জোবায়ের আলম, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল পেয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক পেয়েছেন মো. জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে দলীয় প্রতীক চেয়ার পেয়েছেন এ কে এম শহিদুল ইসলাম।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে গত দুই মেয়াদ ধরে জাতীয় পার্টি থেকে লিয়াকত হোসেন খোকা নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তবে এবার জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড় দেওয়া হয়নি। এবারের নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত কে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। দীর্ঘ ১০ বছর পর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বেশ উচ্ছ্বাসিত। ফলে এই আসনে নৌকা ও লাঙ্গলের ভোটের লড়াই হবে। এই দুজন প্রার্থীকে বেশ ডামা ঢোল পিটিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছে।
এই আসনে ৮ জন প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীক পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন থেকে ফুলের মালা পেয়েছেন মজিবুর রহমান মানিক, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি থেকে একতারা প্রতীক পেয়েছেন মোহাম্মদ আসলাম হোসেন, বিএনএম থেকে নোঙ্গর প্রতীক পেয়েছেন এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান, বিকল্প ধারার বাংলাদেশ থেকে কুলা প্রতীক পেয়েছেন নারায়ণ দাস, মুক্তিজোট থেকে ছড়ি প্রতীক পেয়েছেন মো. আরিফ, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক পেয়েছেন এ এইচ এম মাসুদ।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু এককভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আসনে সেভাবে কাউকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। যদিও জাতীয় পার্টির প্রার্থী তার পোস্টার ছিড়ে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন।
এই আসনে ৫ প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, তৃণমূল বিএনপি থেকে দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ পেয়েছেন মো. আবু হানিফ হৃদয়, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল পেয়েছেন আলমগীর সিকদার লোটন, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীক পেয়েছেন শাহজাহান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক পেয়েছেন হাজী মো. শরিফুল ইসলাম।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বেশ জোরে সোরে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি সহ দলীয় নেতাকর্মী। প্রায় প্রতিদিন পৃথক পৃথক স্থানে উঠান বৈঠক সহ নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই দুজন। তবে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আলী হোসেন কিছুটা সক্রিয় হলেও এখনো সেভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছেনা।
এই আসনে ৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, তৃণমূল বিএনপি থেকে দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ পেয়েছেন মো. আলী হোসেন, সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ থেকে মশাল প্রতীক পেয়েছেন মো. সৈয়দ হোসেন, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল পেয়েছেন মো. মুরাদ হোসেন জামাল, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি থেকে একতারা প্রতীক পেয়েছেন মো সেলিম আহমেদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে চেয়ার প্রতীক পেয়েছেন মো. হাবিবুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে আম প্রতীক পেয়েছেন মো. শহীদ উন নবী, বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে ডাব প্রতীক পেয়েছেন গোলাম মোর্শেদ রনি।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান এককভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের শরীক দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে এই আসনে বড় দলের কোন প্রার্থী নেই।
এই আসনে আসনে পাঁচ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান, ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে দলীয় প্রতীক চেয়ার পেয়েছেন এ এম এম একরামুল হক, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীক পেয়েছেন মোর্শেদ হাসান, তৃণমূল বিএনপি দলটির দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ পেয়েছেন মো. আব্দুল হামিদ ভাষানী ভূঁইয়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি থেকে একতারা প্রতীক পেয়েছেন ছামসুল ইসলাম।