নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ডাকাত আখ্যা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে হ্যান্ডকাফসহ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বজনদের বিরুদ্ধে।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আহত সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেন বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের দামোদরদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচ জন আহত হয়েছেন। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, আড়াইহাজার উপজেলার জাঙ্গালিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল গাফফার সরকারের মেয়ে ও আড়াইহাজার নজরুল ইসলাম বাবু কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রভা সরকারকে (১৮) সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের দামোদরদী গ্রামের নাজিমউদ্দিনের ছেলে সোনারগাঁ সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ মিয়া (২৪) প্রেম করে গত ৬ মাস আগে কোর্ট ম্যারেজ (হলফনামা) বিয়ে করেন। বিয়ের পর সাজিদ প্রভাকে দামোদরদী গ্রামে নিয়ে আসেন। বিষয়টি জানতে পেরে প্রভার পরিবারের লোকজন পুলিশ সঙ্গে নিয়ে সাজিদের বাড়িতে যান। ১৮ বছর পূর্ণ হতে দুমাস বাকি থাকায় প্রভাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই সময় বয়স পূর্ণ হলে তাদের বিয়ে দেওয়া হবে শর্তে প্রভা বাবার বাড়িতে যান। বয়স পূর্ণ হওয়ার পর প্রভার পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রভা আবারো সাজিদের বাড়িতে চলে যান। এ সময়েও প্রভাকে তার সঙ্গেও বিয়ে দেওয়া হবে বলে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায় তার পরিবার। বাড়ি নেওয়ার পর কলেজ ছাত্রীকে পুনরায় বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে গত ৯ জানুয়ারি বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রভা স্বামী সাজিদের বাড়িতে চলে আসেন।
পরবর্তীতে গত রোববার প্রভার বাবা মা সাজিদের বাড়িতে মেয়েকে দেখতে বেড়াতে আসেন। সাজিদের বাড়ি থেকে গিয়ে গত মঙ্গলবার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে সাজিদের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় মামলা দায়ের করা হয়। কলেজ শিক্ষার্থী প্রভার বাবা আব্দুল গাফফার সরকার বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার সকালে আড়াইহাজার থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর আড়াইহাজার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নুরে আলম অপহৃত প্রভা সরকারকে উদ্ধারে সোনারগাঁ সাজিদের বাড়িতে যান। উদ্ধার অভিযানে সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেনসহ আরো তিনজন পুলিশ সদস্য সহযোগিতা করেন। বিদ্যুৎবিহীন থাকার সময় রাত পৌনে ৮ টার দিকে সাদা পোশাকে তিন পুলিশ সদস্য দামোদরদী গ্রামের নাজিম উদ্দিন ওরফে নাজিমের বাড়িতে গিয়ে সাজিদকে পেয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে আসার সময় সাজিদ ডাকাত বলে চিৎকার করেন। এক পর্যায়ে আত্মীয় স্বজন ও আশপাশের লোকজন এসে পুলিশের কাছ থেকে সাজিদকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে হামলাকারীদের আঘাত করতে থাকেন। উত্তেজিত হয়ে আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা পুলিশের ওপর হামলা করেন। হামলায় সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর হোসেনের মাথায় আঘাত পান। এছাড়াও আড়াইহাজার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) নুরে আলম, কনস্টেবল পারভেজ, অপহৃত প্রভার বাবা আব্দুল গাফফার আহত হন।
আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলার এক পর্যায়ে প্রভা ও সাজিদ হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে যান।
হামলার ঘটনার খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে যাওয়া সাজিদের চাচা ইলিয়াস মিয়া (৪৮), প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর (৪২), আমজাদ হোসেন (৪০), মামুন (২৩), মারুফকে (১৮) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার পাঁচ জনসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) মো. আলমগীর হোসেন বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, জাঙ্গালিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল গাফফার গত মঙ্গলবার সকালে তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেন। অপহৃত প্রভার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসিন বলেন, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে হ্যান্ডকাফসহ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপহৃত কলেজছাত্রীসহ পুলিশের হ্যান্ডকাফ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।