নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফুটপাতে ও সড়কের পাশে ময়লা ফেলে কেউ যেন পরিবেশ নষ্ট না করে সে জন্য উপস্থিত দোকানিদের ওয়াদা করান অনলাইন ক্যাসিনোর মূলহোতা হিসেবে পরিচিত সেলিম প্রধান। শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে ভুলতা ফ্লাইওভারের নীচে ও সড়কে বসা দোকানিদের ডেকে ডেকে এই ওয়াদা করান তিনি।
ভুলতা ফ্লাইওয়ারের নীচে ফুটপাতে বসে মাছ বিক্রি করেন আব্দুর রহিম। তিনি কেন সড়ক নোংরা করেছেন জানতে চাইলে ওই দোকানি ওয়াদা করে বলেন, তিনি আর রাস্তা-ঘাট নোংরা করবো না। এমনকি অন্য কাউকে নোংরা করতে দিবেন না। যারা নোংরা করে তাদের নিষেধ করবেন বলে ওয়াদা করেন।
এভাবে আরও বেশ কয়েকজন দোকানিকে সড়ক নোংরা করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন ও ওয়াদা করান। তবে এর ব্যর্তয় ঘটলে পরিবেশ নোংরাকারীদের ছবি বড় করে সাটিয়ে দেওয়া হবে, যাতে করে সবাই তাদের চিহ্নিত করতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি দেন সেলিম প্রধান।
দোকানিদের সড়ক নোংরা করতে নিষেধ করে সেলিম প্রধান বলেন, আমি ভালো মানুষের পক্ষে। আমি গরীবের ডন। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র, আমি তাদের পক্ষে। গরীব মানুষের কষ্টে আমাকে সব সময় পাবে। এলাকা থেকে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। কেউ এলাকা নোংরা করবেন না। এলাকায় কোনো মাস্তানি চলবেনা।
রূপগঞ্জে চাঁদাবাজি চলবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাঁদাবাজরা ধান্ধার কারণে এসব করেন। এসব চাঁদাবাজদের আমি বলবো, তোমাদের চাঁদা যা লাগবে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাও। ১ টাকা চাঁদা লাগলে ২ টাকা নিয়ে যাও। কিন্তু এলাকা পরিষ্কার করো। রুপগঞ্জ একটি পরিবার। সব ভালো লোক এক পরিবারে থাকতে হবে । সবাইকে এই পরিবারের মেম্বার হতে হবে। খারাপ লোকের বিরুদ্ধে যেহেতু নেমেছি, আরও নামবো। ওদের ধ্বংস করে ছাড়বো। ভালো হয়ে যাও।
মাদক বন্ধ করবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদক ঘরে ঘরে ঢুকে গেছে। সর্ব প্রথম ভুলতা ইউনিয়নের মাদক বন্ধ করবো। যারা মাদকের ব্যবসা করো পালিয়ে যাও। যুবকদের ঠিক করার জন্য প্রথমত মাদক বন্ধ করতে হবে। যুবক ঠিক হলে, ভালো পরিবেশ পেলে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারলে চাকরি এমনিতে পাবে। এরপর কেউ চাকরি না পেলে আমি আছি।
পরে রূপগঞ্জের ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকায় বাড়ি পুড়ে যাওয়া অসহায় ও বিধবা বৃদ্ধা সুভতারা বেগমকে নগদ অর্থ সহ স্মার্ট টেলিভিশন প্রদান করেন সেলিম প্রধান। এ সময় সেলিম প্রধানকে জড়িয়ে ধরে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন সুভতারা বেগম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ নভেম্বর (শনিবার) রাতে সুভতারা বেগমের বাড়িতে বৈদ্যুতিক সর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে সবকিছু পুড়ে যায়। এরপর থেকে এ নিরীহ পরিবারটি খোলা আকাশের নিচে কোন রকমে রাত পার করছিল। ওই সময় নগদ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান সহ পাকা বাড়ি করে করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সেলিম প্রধান। এখনো সেই বাড়ি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করা হয়। পরে তার রাজধানীর গুলশানের বাসা, বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়। পরে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে সেলিমের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় সংস্থাটি। ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় সেলিম প্রধানকে আট বছর কারাদণ্ড ও ১১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকার বিশেষ আদালত। সম্প্রতি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হন তিনি।