নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তৃতীয় দিনেও দলীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। সদ্য ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটির পদবঞ্চিতরা এই তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সেই সাথে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে শহরের দুই নং রেল গেইট এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রোববার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় খোলা অবস্থায় ছিল। তবে সেখানে কোন নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। আর ভবনটির দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের মূল ফটকে ঝুলছিল তালা।
এর আগে, শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। ওই সভায় বক্তব্যের এক অংশে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র আইভী বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে আমাদের ছোটভাই এপন আর চঞ্চলকে নেতা বানায়া দিল। ওরা যদিও নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু আনোয়ার কাকা (মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি) প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়ে এই কমিটি দিয়েছেন। তিনি দেওভোগকে বুঝিয়েছেন, উনি যা চাইবেন তা হবে এখানে। যেই দেওভোগে পূর্বপুরুষেরা নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগের, তাদের অসম্মানিত করেছনে তিনি। আজকে এখানে দাঁড়িয়ে দেওভোগের মানুষ হিসেবে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম আমি।’
ওই দিন সন্ধ্যায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগরের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এসে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় তারা ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটি ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয়। আর যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করেন। এ সময় তারা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন এবং তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
আওয়ামী লীগ অফিসে তালা ঝুলানোর বিষয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছাব্বির আলম সাগর বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাপে আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে তালা দিয়েছি। যে পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা না আসবে সে পর্যন্ত এই তালা খুলবো না। আর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের হস্তক্ষেপে এই পদগুলো নিয়ে পুনর্বিবেচনা করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা যাতে হয় সেকারণে তালা দিয়েছি। রাজাকারপুত্র, নবাগত নেতৃবৃন্দদের দিয়ে আজকে ওয়ার্ড কমিটি করা হয়েছে। সভাপতির কথামত যে চলে তাকে সে কমিটিতে রাখে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত বলেন, আজকে দশ বছর অতিক্রম হয়েছে মহানগরের এই ২৭ টা ওয়ার্ডের কমিটি হতে পারে নাই। এবার সিদ্ধিরগঞ্জে ১০ টা কমিটি ছাড়া শহর ও বন্দরের ১৭ টা কমিটি দেয়া হয়েছে। সেখানে যাদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে তাদের অনেককে আমরা চিনি না। ইতোমধ্যে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের আমরা বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও এই ওয়ার্ডের কমিটির বিষয়ে কিছুই জানিনা। মেয়র আইভী সহ আমাদের আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়নি। এটা জঘন্য কাজ করেছে। আওয়ামী লীগ তো কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষিত কমিটির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হচ্ছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। পত্রিকায় দেখলাম, ঘোষিত কমিটির মধ্যে রাজাকারের সন্তান সভাপতি হয়েছে, এই কমিটি আওয়ামী লীগের কমিটি হতে পারে না। এরা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে কবরস্থ করার চেষ্টা করছে। অথচ দীর্ঘদিন যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত রয়েছে তারা কেন বঞ্চিত হলো। এ নিয়ে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ক্ষোভ চলছে। এই বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সাহেবকে জানাবো। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবকে জানাবো।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকান সাহা বলেন, কমিটি পছন্দ না হলে দলীয় মিটিংয়ে তারা বলতে পারতো। কিন্তু তারা এমনটি করিনি। এটা গঠনতন্ত্র বিরোধী। তারা এরুপ করায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এই বিষয়টি আমি দলীয় ফোরামে ব্যখ্যা দিবো। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে । দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
অফিসের তালা খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে বা যারা তালা দিয়েছে। তারা তালা খুলে দিবেন। নতুবা দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।