নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭ ওয়ার্ডের কমিটি নিয়ে এবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি সেলিনা হায়াত আইভী। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে এক সভায় এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এরআগে ১২ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ১৭টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা।
সভায় মেয়র আইভী বলেন, কোন অধিকারে, কোন সাহসে আমাকে জিজ্ঞেস না করে আপনারা ১৭টি ওয়ার্ডে কমিটি দেন।এগুলা কি ছেলে খেলা নাকি, এগুলা কি আনোয়ার সাহেব ও খোকন সাহার বাপের সম্পত্তি। আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুর দল। আমি শেখ হাসিনার একজন কর্মী। ২০০৩ থেকে আমি কখনও দলের কোনো ব্যাপারে কখনও মাথা ঘামায় নাই। আজকে বাধ্য হইছি। আমি ১৭টি ওয়ার্ডে পাল্টা কমিটি দিবো।
তিনি বলেন, ১৫নং ওয়ার্ডে কাজী সাহেব দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন, সেই লোকের জায়গায় ১২নং ওয়ার্ড থেকে এক লোকরে এনে ১৫নং ওয়ার্ডের কমিটি দিয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের ৯টি ওয়ার্ডে কমিটি নিয়ে কিছু হয় নাই। কারণ আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য শামীম ভাই বলে দিছেন, এটা আমার নির্বাচনী এলাকা তোমরা ওখানে যাবা না। আমি আমার এলাকায় যেভাবে কমিটি করি সেভাবেই করবো। আনোয়ার কাকা ও খোকন সাহেবের কাছে প্রশ্ন ওই ৯টি ওয়ার্ড যদি তার নির্বাচনী এলাকা হয়ে থাকে তাহলে ২৭টি ওয়ার্ডই আমার নির্বাচনী এলাকা। আমি তো আর শামীম ভাইয়ের মত বলতে পারবো না, আমার এলাকায় এটা করতে পারবেন না। কিন্তু আমার মতামত নিয়ে যদি না করে তাহলে আমি পাল্টা কমিটি দিবো।
এদিকে সন্ধ্যার পর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগরের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে কার্যালয়ে এসে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় তারা ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটি ভুয়া ও সেখানে যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করেন। পরে নেতা-কর্মীরা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন এবং তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনা বলেন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির মৃধা বলেন, ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটিতে রাজাকারপুত্র, মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীর পুত্রসহ বিতর্কিতদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে ত্যাগীদের বঞ্চিত করে রাজাকারপুত্র এমনকি মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারীর ছেলেকে শীর্ষ পদ দেয়া হয়েছে। আমরা এই কমিটি মানিনা। এব্যাপারে আমরা আমাদেও নেতা শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপ চাইবো।
উল্লেখ্য, কমিটি ঘোষনার পর থেকে পুরো মহানগরজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। দীর্ঘদিন যারা দলের জন্য কাজ করছেন তাদের বঞ্চিত করে টাকার বিনিময়ে মাইম্যানদের নেতা বানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তৃনমূলের নেতা-কর্মীরা।