নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পৌর এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) রাতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ফলে তিনটি বাড়ি ও দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। হামলায় নারীসহ ১২ জন আহত হন।
আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্থানীয় ক্লিনিক, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে সোনারগাঁ থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর সোনারগাঁয়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসেন। এর পর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের অনুসারী পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাহিম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন।
পরদিন মুন্সিরাইল বাজারে জাপা নেতা মুজিবুর রহমানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়। এছাড়া ভূমি অফিস, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। এতে সজিব মিয়া নামের যুবদল কর্মী মোশারফ হোসেনের কাছে বিচার দাবি করেন। এর ফলে রোববার (১৮ আগস্ট) বিকেলে নোয়াইল এলাকায় আব্দুর রাহিমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বিচার দাবি করা হলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সোমবার (১৯ আগস্ট) রাতে মোশারফ অনুসারী যুবদল নেতা হাসনাইনসহ কয়েকজন মুন্সিরাইল বাজারে যান। সেখানে বাগবিতণ্ডার পর সংঘর্ষ বেঁধে যায়, এতে কিছু সদস্য আহত হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর আব্দুর রাহিমের ওপর হামলার খবর পেয়ে তার শ্যালক হাসান মিয়ার নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের একটি দল সজিবের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এতে সজিব, লামিয়া, সেলিনা, আয়েশা আক্তারসহ আরও আটজন আহত হন। হামলা ও ভাঙচুরের কারণে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোনারগাঁ পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির রফিক অভিযোগ করেছেন যে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আব্দুর রাহিমের নেতৃত্বে কিছু নেতাকর্মী পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলিতে চাঁদা দাবি করে আসছেন। এর মধ্যে এক জায়গা থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদের হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হতে হয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আব্দুর রাহিমের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সোনারগাঁ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, রাহিমের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে এবং তাকে সতর্ক করা হয়েছে। থানার সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, বিষয়টি নিজেদের মধ্যে ঘটেছে এবং দুই পক্ষকে ডেকে সমাধান করা হবে।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান জানান, বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা সম্পর্কে শুনেছেন, তবে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।