ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লায় অবস্থিত নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে (নম পার্ক) ‘জুয়া’ বন্ধ করতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান। সোমবার (২৯ জানুয়ারির) মধ্যে এই জুয়ার কার্যক্রম বন্ধ না হলে আগামীকাল তিনি নিজে গিয়ে সেসব কার্যক্রম বন্ধ করবেন বলে আলটিমেটাম দিয়েছেন। এদিকে পার্কে মেলার নামে জুয়ার কার্যক্রমের বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে ফেসবুকে স্ট্যটাস দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম। তবে বিষয়টি জানার পরে তিনি মেলার কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ফতুল্লা স্টেডিয়ামের বিপরীত পাশে অবস্থিত পার্কটি প্রয়াত সাংসদ একেএম নাসিম ওসমানের স্মৃতিতে নির্মিত। এটি ‘নম পার্ক’ বলে অধিক পরিচিত। গত বেশ কয়েকদিন ধরে এ পার্কে চলছে ‘লাকি কুপন‘ বিক্রির কার্যক্রম। অভিযোগ রয়েছে, পার্কটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের তত্ত্বাবধানেই চলছে এই লটারি বা লাকি কুপন বিক্রি। এ নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বেশ ঢালাওভাবে সংবাদ প্রকাশ করে আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় এবার মুখ খুলেছেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে চাষাঢ়ায় বিকেএমইএ ভবনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় নম পার্কের জুয়া বন্ধ করতে আলটিমেটাম দিয়েছেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, ‘নাসিম ওসমান চারবারের সংসদ সদস্য, তাঁর নামে জুয়ার বোর্ড বসবে! কে সেই পারমিশন দিলো? আমি চাই আজকের থেকেই এই জুয়ার বোর্ড যেন বন্ধ হয়৷ নাহলে আমি এই অপকর্ম বন্ধ করবো৷’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি আজকে সকালে গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখি কেউ নাই ৷ আমি শুনেছি, নাসিম ওসমানের সন্তান এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছেন, আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই ৷ চিলড্রেন পার্ক হিসেবে ওটাকে পার্ক বানানো হয়েছে, সাথে একটা রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে৷ কিন্তু সেখানে জুয়া চলবে, তা তো হতে পারে না৷ আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ রাখবো, আজকে সন্ধ্যা থেকে সেখানে যেন কোন জুয়া না চলে ৷ তিনি যত বড়ই নেতা হন না কেন, এটি তিনি করতে পারেন না৷’
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমরা প্রেস ক্লাব, বার অ্যাসোসিয়েশন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার ও ব্যবসায়ী সমাজ বলছি, ওনারা সতর্ক হয়ে যাবেন এবং এটা (জুয়া) বন্ধ হয়ে যাবে৷ যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে আগামীকাল সেলিম ওসমানের নেতৃত্বে ওই পার্ক নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে৷ যদি আজকের মধ্যে ওটা বন্ধ করা না হয় তাহলে আগামীকাল সন্ধ্যার মধ্যে সংসদ থেকে এসে আমি ওটা উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে৷ যদি কোন বাপের ব্যাটা থাকে তাহলে সেটা আটকিয়ে রাখুক৷ আমরা কথা না কাজে বিশ্বাসী।
এদিকে নম পার্ক এর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম জুয়ার কার্যক্রমের বিষয়ে কিছুই জানতো না বলে দাবি করেছেন। সোমবার বিকেলে শাহ নিজাম তার ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে,, ইদানিং নম্ পার্ক নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি মুলক তথ্য আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই প্রচার করা হচ্ছে। বিগত ৯ বছর যাবৎ এই পার্কটি চলছে। এ পর্যন্ত এমন কোন কাজ করা হয়নি যা পার্কের নাম করনে বিন্দুমাত্র সন্মানহানিকর। শুরু থেকেই এই পার্ক লোকসানে আছে। কিন্তু অনেক কস্ট হলেও পার্কটি বন্ধ করিনি। গত কিছু দিন আগে আমি যখন নারায়ণগঞ্জের একটি সামাজিক সংগঠনের প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম তখন আমার পার্কের কতৃপক্ষের লোকের সাথে একটি ইভেন্টের সাথে চুক্তি হয়,, মেলা করার,,যাতে পরিস্কার ভাবে লিখা আছে,, এখানে কোন জুয়া,,অশ্লীল ও অসামাজিক কাজ করা যাবে না। ব্যাস্ততার কারনে আমি পরিপূর্ণ খেয়াল রাখতে পারিনি,, যার সুযোগে কিছু লোক আমার বক্তব্য ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছে মতো সংবাদ পরিবেশন করেছেন,, যা আমি মনে করি এটা সাংবাদিকতার নিয়মের বাইরে। আমি যখন ভালোভাবে জানতে পারলাম তখনি পার্ক কতৃপক্ষকে এই মেলা বন্ধের নির্দেশ প্রদান করি।আমার রাজনীতির দীর্ঘ ৩৮/৩৯ বছর বয়সে নারায়ণগঞ্জে এমন কোন কাজ নিজ স্বার্থে করিনি যাতে মানুষ খারাপ বলবে। আমি আমার নিজের স্বার্থের প্রয়োজনে এমন কোন কাজ করিনি যে কাজের জন্য আমার নেতা শামীম ওসমানের সন্মান ক্ষুন্ন হবে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট চুক্তির বাইরে কাজ করার কারনে চুক্তি পত্র বাতিল করে মেলা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমি রাজনীতি করি আদর্শের,, কোন ধান্দার রাজনীতি করি না এটাই আমার সাহস এটাই আমার সততা।