নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কারের দাবিতে ডাকা আন্দোলনের সুযোগে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সম্পত্তিতে আগুন দিয়ে নাশকতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান বলেছেন, ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে গত ১৭ জুলাই দুপুরে নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া থেকে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় এসে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা শহরে সব প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর চাষাড়া রেলস্টেশনে জড়ো হয়ে ঢাকা থেকে আসা যাত্রীবাহী ট্রেনের সামনে অবস্থান নিলে ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার মধ্যে কোনো ধরনের নাশকতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি করে যার যার ঘরে ফিরে যায় আন্দোলনকারীরা।
পরদিন ১৮ জুলাই সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় জড়ো হতে থাকে। দুপুর থেকে শুরু হয় তা-ব। কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই লিংক রোডের সামনে থেকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান চাষাড়া খাঁজা মার্কেটের সামনে এনে আগুন ধরিরে দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। চাষাড়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাঙচুর করে নাশকতাকারীরা। এ সময় রাস্তার অপরপাশে চায়না জংশন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে ভিডিও করার সময় আন্দোলনকারীরা সেই চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভেঙে ফেলে। ওইদিন সন্ধ্যার পর আরও লোকজন জড়ো হয় শহরে। অন্ধকার হতেই শুরু হয় তা-ব। ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় নাশকতাকারীরা। বাদ যায়নি নগর ভবন, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, মার্কেট বিপণিবিতান, সিনেমা হল, দোকানপাট কোনো কিছুই। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ভেতরে ঢুকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ ভেঙে কয়েক লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ক্লাবের অফিস রুমে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি কম্পিউটার ও নগর প্রায় ৭ লাখ টাকা লুটে নেয়। রিসেপশনে ঢুকে চারদিকের গ্লাস, আসবাবপত্র ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাইরে থাকা ক্লাব সদস্যের একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা।
একই দিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে বিজিবি ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। নারায়ণগঞ্জের একমাত্র এসি বাস তথা শীতল বাসের ডিপোতে ঢুকে ২৬টি বাস পুড়িয়ে দেয়। পার্শ্ববর্তী নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্ক (নাম পার্ক) ভাঙচুর করে তা-বকারীরা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহর, লিংক রোড, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যে ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে তাতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। লিংক রোডের এসবি গার্মেন্টসে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতি করা হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি বিভিন্নভাবে তদন্ত করছি।