নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে দুই প্রার্থীর নতুন গাড়ী নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একজনপ্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যেও প্রাডো, আরেক জন ৬০ লাখ টাকা মুল্যের বিলাশবহুল নিশানগাড়ি হাকিয়ে চলছেন। গাড়ি ক্রয়ের অর্থের উৎস নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়।
জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ—১আসনে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার তার দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রাথী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া। শুরু থেকেই তাদের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী একটি মহলের সাথে সখ্যতার গুঞ্জন উঠেছিল।
আসনটির নৌকার প্রাথীও করেছিলেন একই অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উভয় প্রাথীই নিবাচনী প্রচারনায়আলিশান দুই নতুন গাড়ি নামিয়ে শোডাউন করছেন। এর মধ্যে সম্প্রতি কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রাথী নিবাচনী প্রচারণাকালে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের একটি সাদা রঙের ব্রান্ডনিউ প্রাডোতে চড়ে আসেন। এতে স্থানীয়দের মাঝে শাহজাহানকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
অন্যদিকে, গতকাল তৃণমূল বিএনপির প্রাথী তৈমূর আলমখন্দকারও একটি ‘পিত্তি’ রঙের নিশান এক্স ট্রেইল গাড়ি নিয়ে নিবাচনী প্রচারণায় আসেন। তৈমূরেরওই নতুন গাড়ি দেখে চমকে উঠেন তার প্রচারণায় অংশ নেয়া বহু সমথকরাও। এদিকে, ভোটের মাঠে তৈমূর ও শাহজাহানের দুই নতুন গাড়ির খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পরলে স্থানীয়দের মাঝে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তাদের ওই বিলাশবহুল দুই গাড়ীর উৎস কী তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। জানা গেছে, শাহজাহান ভূঁইয়া রূপগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় সরকারী গাড়ী ব্যবহার করতেন। ব্যক্তিগত গাড়ি বলতে ছিলো একটিএক্স—নোয়া। তাও আবার ২০০৬ এর মডেলের।
হলফনামা ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৪ সালে শাহজাহান ভূঁইয়ার বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ব্যবসার মুনাফা, বাড়ি, দোকানভাড়া, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে এখন তিনি বছরে আয় করছেন সাড়ে ৮১ লাখ টাকা, যা ২০১৪ সালের তুলনায় প্রায় ১৭ গুণ বেশি। তবে তাঁর হাতে কিংবা ব্যাংকে নগদ এক টাকাও নেই বলে তার হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি। সেই শাহাজাহান ভূইয়া ভোটের মাঠে নেমে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের বিলাশ বহুল ব্রান্ড নিউ গাড়ি কোথায় পেলেন সেই প্রশ্নই জনমনে।
অন্যদিকে, হলফনামা অনুযায়ী তৈমুরের নগদ ৬ লাখ ৫১হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকাসহ মোট অস্থাবর সম্পদ হয়েছে ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। সেই তৈমূর ভোটের মাঠে নেমে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের নতুন গাড়ি কিনেছেন। তার ওই নতুন গাড়ির অর্থের উৎস কী, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে।
এদিকে, গতকাল তৈমূর আলম খন্দকারের কাছে তার গাড়ির বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই পাশে থাকা তার স্ত্রী অনেকটা চটে উঠেন। পরে তৈমূর আলমখন্দকার বলেন, গুলশানে তার শ্যালকের গাড়ির শো—রুম রয়েছে। ওই শ্যালকই তাকে নির্বাচন উপলক্ষ্যে ওই নতুন গাড়িটি উপহার দিয়েছে। তবে, শাহজাহান ভূইয়া প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যেরওই বিলাশবহুল গাড়িটি কোত্থেকে পেয়েছেন, সেই বিষয়ে তার কাছ থেকে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গুঞ্জন চলছে, একটি প্রভাবশালী মহল শাহজাহান ও তৈমূরকে নির্বাচনে নামিয়ে অর্থের খেলায় মেতেছেন।
ইতিমধ্যেই রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রাথী গোলাম দস্তগীর গাজী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রূপগঞ্জের পূর্বাচলকে ঘিরে জমির দাম বহুগুণে বেড়ে গেছে। তাই প্রভাবশালী একটি ভূমিদস্যু চক্র রূপগঞ্জের জমি দখলে নিতে পুতুল প্রাথী দাঁড় করি য়েছেন। ভূমিদস্যুদের আর্থিক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাথী হয়েছেন তারা।’ ওই ভূমিদস্যু মহল থেকেই শাহজাহান ও তৈমূর নতুন গাড়ী উপহার পেয়েছেন কিনা তা নিয়েই জোরালো গুঞ্জন চলছে রূপগঞ্জের সাধারণ ভোটারদের মাঝে।