আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন করতে দেবে না বিএনপি, এত সাহস কোথায় পেয়েছে? এ আগুন-সন্ত্রাসদের এখনই প্রতিহত করতে হবে। আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার পথ বন্ধ করতে হবে।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রথম নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কুলাঙ্গার লন্ডনে বসে হুকুম দিচ্ছে আর দেশের কিছু পোলাপান আগুন-সন্ত্রাস করছে। এটা চলতে দেওয়া হবে না। মনে রাখতে হবে আগুন নিয়ে খেলতে গেলে সেই আগুনে নিজের হাত পোড়ে। নির্বাচন বানচাল করার সাহস দেখালে হবে না। যারা লুটেরা তারাই নির্বাচন বানচাল করতে চায়।’
আরোপড়ুন: দেশের মানুষ অগ্নি সন্ত্রাসীদের প্রত্যাখ্যান করেছে: শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার হারাবার কিছু নেই। সব হারিয়ে, নিজের সন্তানদের দূরে সরিয়ে দেশে এসেছিলাম দেশের মানুষের জন্য। পঁচাত্তরের পরে যখন দেশে আসি তখন ভেবেছি এই বাংলাদেশ আমার একটি পরিবার। সেই থেকে দেশের জন্যই কাজ করছি। জনগণের অধিকার আদায়ে কাজ করছি।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে ভোট চুরি করে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এরপর তাদের সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকে অতীতের মতো তারা অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষ পুড়িয়েছে। গাড়ি ভাঙচুরসহ দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে। এত অগ্নিসন্ত্রাস করেও তারা নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি। মনুষ্যত্ববোধ থাকলে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতো না। মায়ের বুকের শিশুকে মাসহ পুড়িয়ে হত্যা করতো না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘খালেদা জিয়া যে কূপ খনন করে গ্যাস পায়নি, সেই কূপ খনন করে আমরা গ্যাস-তেল দুটোই পেয়েছি। এটা আমাদের অর্জন। নিয়ত ভালো থাকলে আল্লাহ সবই দেন। তাদের নিয়তই ভালো ছিল না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই সিলেটে ১৯৮১ সালে এসে শুরু করেছিলাম নির্বাচনী প্রচার কাজ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিবার নির্বাচনের আগে সিলেটে আসি। আজও আবার এসেছি। ১৯৫৯ সালে সিলেটে এসেছিলাম। তখন ছোট ছিলাম। তবে ১৯৮১ সালে সিলেটে আসাটা ছিল ভিন্ন। কারণ তখন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে সিলেটে এসেছিলাম। তখন একটা স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমন অবস্থায় দেশে ফিরেছিলাম, যখন এই দেশে আমার বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। চারদিকে পাকিস্তানের দোসররা ছিল। আমি দেখেছি কীভাবে ভোট চুরি করে, কীভাবে গণতন্ত্র হরণ করে। দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করেছি। তখন থেকেই মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু মনোনয়ন বাণিজ্য করে তারাই নির্বাচন শেষ করে দেয়। এরা মানুষের স্বার্থ চিন্তা করে না। তাদের উদ্দেশ্যই লুটপাট করা ও মানুষ পোড়ানো।’
‘আজ দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির আমলে সেটা ছিল না। দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমরা ১৮ শতাংশে এনেছি। দেশের আট লাখ ৪১ হাজার গৃহহীন মানুষকে ঘর দিয়েছি। ২১টি জেলা গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছি। তার মধ্যে সিলেট অন্যতম। আমাদের উদ্দেশ্য কোনো মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে খাদ্যের কষ্ট হবে না। আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি। ৯ কোটি মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করছি, যা বিএনপির আমলে কল্পনাও ছিল না। আমরা পোশাকশ্রমিকের মজুরি ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় নিয়েছি। মোবাইল ফোনের ব্যবহার সহজলভ্য হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। এখন গ্রামের মানুষও ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে এটাই বড় কথা। ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে মানুষ। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেট প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের সঙ্গে আছে। কোনো কিছুতেই সিলেটকে ছাড়া হয় না। সিলেটে হাইটেক পার্ক করেছি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেন হচ্ছে।’
৩৪ মিনিটের ভাষণের শেষ পর্যায়ে সিলেটবাসীর কাছে ভোট চান আওয়ামী লীগ সভাপতি। এসময় তিনি নৌকাকে বিজয়ী করতে উপস্থিত সবাইকে হাত তুলে ওয়াদা করান।
এর আগে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে জনসভার মঞ্চে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় সিলেটের একটি আঞ্চলিক গান শুনিয়ে শেখ হাসিনাকে স্বাগত সিলেটের আঞ্চলিক শিল্পীরা।
জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি লালকার্ড পেয়ে গেছে। বিএনপি নাই, খেলাওনি। খেলায় আছে এক হাজার ৮৯৬ জন। সারাদেশে নির্বাচনে ৩০০ আসনে এরাই খেলবে। বিএনপির ধর্মঘট, অবরোধ, রাজনীতি কর্মসূচি সব ভুয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটের মানুষ বড়ই ভাগ্যবান। যেদিকে তাকাই রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ। আলো আর আলো। কোথাও অন্ধকার নেই। শতভাগ বিদ্যুৎ। কোথায় আছে বিএনপি? পালিয়ে গেছে?’
এরআগে বেলা সাড়ে ১১টায় বিমানযোগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন তিনি।