নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস থাকবে না বলে বক্তব্য দেওয়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সেই ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ ও অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি শেখ আনিসুজ্জামান কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাঠিয়ে তাঁদের তলব করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য একজন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে তলব করেছে অনুসন্ধান কমিটি। তাঁদের ব্যাখ্যা ও অভিযোগ অনুসন্ধানের পর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই ছাত্রলীগ নেতার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন- রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভূঁইয়া ওরফে মাসুম, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হোসেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শমসের আলী ও ওই ইউপির ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য রিতা আক্তার। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের তলব করা হয়েছে বলে নোটিশে বলা হয়েছে।
শেখ ফরিদ ভূঁইয়াকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও চিত্রে শেখ ফরিদ ভূঁইয়ার দেওয়া একটি বক্তব্যের বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটি জানতে পেরেছে। সেই বক্তব্যে ফরিদ ভূঁইয়া নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে এলাকায় গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ থাকবে না বলে হুমকি দিয়েছেন, যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮–এর বিধি ১১ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২–এর অনুচ্ছেদ ৭৩ এর লঙ্ঘন।
বাকি তিনজনকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, তাঁরা চনপাড়া ও পশ্চিমগাঁও এলাকায় তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, সমর্থকদের মারধর ও বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছেন। এ কর্মকাণ্ড সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮–এর বিধি ৭(২), ১১ (গ) এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২–এর অনুচ্ছেদ ৭৩ ও ৭৭–এর লঙ্ঘন।
এসব ঘটনায় কেন জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সুপারিশ করা হবে না, সে বিষয়ে বুধবার দুপুর ১২টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়নের ঋষিপাড়া এলাকায় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে নির্বাচনী উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগ নেতা শেখ ফরিদ। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এখানকার (ঋষিপাড়া) মা–খালারা জানেন, আজ থেকে ১০ বছর আগেও কিন্তু এত সুন্দর মন্দির ছিল না। উপজেলার সবচেয়ে পুরোনো মন্দির কালীবাড়ি মন্দির। সেই মন্দির থেকেও ঋষিপাড়ার মন্দিরটি সুন্দর। গোলাম দস্তগীর সব সময় আপনাদের পাশে আছেন। আপনাদের বয়স্ক ভাতা দিচ্ছেন, পানি দিচ্ছেন, গ্যাস দিচ্ছেন। সব দিকের গ্যাস কিন্তু কাইটা দিছে, একমাত্র মুড়াপাড়ার গ্যাসে কেউ হাত দিতে পারে নাই। এটা কিন্তু মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর অবদান।’
গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে ভোট চেয়ে শেখ ফরিদ ভূঁইয়া বলেন, ‘অনেকেই আইসা বলব, “আমিও আওয়ামী লীগ করি”। কিন্তু নেত্রী শেখ হাসিনার মার্কা হলো নৌকা। তিনি রূপগঞ্জে গাজী সাহেবকেই নৌকার দায়িত্ব দিছেন। আপনাদের আইসা কেউ যদি ভুলভাল বলে, আপনারা কিন্তু কোনো ভুল করবেন না। আপনাদের যে মূল্যবান ভোট, আপনাদের যে আমানত, এটা কিন্তু গাজী সাহেবকেই দিতে হবে। নৌকা মার্কায়ই আপনাদের ভোট দিতে হবে। এটা মনে রাইখেন। নয়তো এই যে আপনাগো পানি আছে, বিদ্যুৎ আছে, গ্যাস আছে, এইগুলা কিন্তু কিচ্ছু থাকব না। এইগুলা কিচ্ছু থাকব না।’