নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ওয়াসার পানির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। এ সময় তারা মাথায় কালো কাপড় পরিধান করে কঠোর আন্দোলনের ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়ির পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার তাপসের দোকানের সামনের মূল সড়ক অবরোধ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা প্রতিবাদ করেন। এতে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল।
আন্দোলনকারী ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আসিফুজ্জুমান দূর্লভ বলেন, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড দুটি পানির পিপাসায় মরুভূমি হয়ে গেছে। মানুষ আজ পানির জন্য হাহাকার করছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে মাননীয় মেয়র আপনার বাড়ি ও দায়িত্বরত জনপ্রতিনিধিদের বাড়ির পানি বন্ধ হয়ে যাবে। প্রয়োজনে আমরা আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে বাধ্য হবো।
২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বন্দর পানি আন্দোলন কমিটির সমন্বয়ক এম রায়হান কবির বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাজেট ৬শ ৯৫ কোটি ৭ লক্ষ টাকার অধিক। অথচ সেখানে ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। পানির পাম্প প্রতিস্থাপন করছেনা। আজকে এক বছর যাবত এই সমস্যায় আমরা জর্জরিত প্রায়। আজকে এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে ম্লান করে দেওয়া হচ্ছে। তাই আমরা দাবি করছি, পুরাতন পানির পাম্প সচল রেখে নতুন পাম্প স্থাপন করতে হবে। নতুবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কাউন্সিলরের বাড়ির পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
বন্দর পানি আন্দোলন কমিটির আহবায়ক ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউসুফ আতিক, পানির পাম্প ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে মাননীয় মেয়র আপনি ওয়াসার দায়িত্ব কেন নিয়েছেন? আমাদের পানির ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চলবে। নতুন পাম্প স্থাপন করতে হবে, সেই সাথে পুরনো পাম্পটি সচল রাখতে হবে।
বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু বলেন, মেঘনা নদীর পানি রিফাইন করে সরবরাহ করা হলে, আশা করছি এই সমস্যা থাকবেনা। আমি মেয়রকে অনুরোধ করবো জনগণের এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন। যাতে করে একটি এলাকার মানুষও যাতে পানি সংকটে না ভোগে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বন্দর পানি আন্দোলন কমিটির আহবায়ক ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউসুফ আতিক, বন্দর পানি আন্দোলন কমিটির সমন্বয়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা এম রায়হান কবির, যুবলীগ নেতা সামসুল ইসলাম ভূইয়া, ছাত্রনেতা ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডবাসি সুসমিত সহ প্রমুখ। ব্যানার ও নানা রকমের ফেস্টুন হাতে নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা মূল সড়কে অবস্থান নেয়। এতে করে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল মামুনের নেতৃত্বে একটি টিম এসে তাদের শান্ত করেন। আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে আল মামুন বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেয়রের (ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী) সাথে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেবো। এবং অতি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহীন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডের রূপালী এলাকায় স্থাপিত পাম্পের লেয়ার অনেক নিচে নেমে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও সুফল পাওয়া যায়নি। তবে পাশ্ববর্তী দড়িসোনাকান্দা এলাকায় নতুন পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ওই পাম্পের পানির সংযোগের পাইপ আমাদের ওয়ার্ডের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হবে। এতে করে আমাদের ওয়ার্ডের রুপালী ও ছালেহনগর এলাকার মানুষজন পানি পাবে। এছাড়া মেয়রের নির্দেশে শাহী মসজিদ এলাকায় পাম্প বসানো হবে শুনেছি। এতে করে আমাদের ওয়ার্ডের পানি সমস্যা খুব শিঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহমেদ বলেন, আমাদের এই ওয়ার্ডের ওয়াসার পানির পাম্প বিকল হয়ে গেছে। নতুন করে পাম্প স্থাপন করা হবে। এছাড়া আশেপাশে থেকে লাইনে যে পানি আসে তার সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। একারণে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এই রমজানের মধ্যেই পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে পানির গাড়ি দিয়ে অনেক এলাকায় আমরা ওয়াসার পানি সরবরাহ করে আসছি। যদিও এটা যথেষ্ট নয়, তবুও মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমানো চেষ্টা করছি। নতুন পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এই রমজান মাসের মধ্যেই নতুন পাম্প স্থাপন করা হবে।