নারায়ণগঞ্জে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় গার্মেন্টস সেক্টর ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। নাশকতাকারীরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের এসবি ফ্যাশন এন্ড কম্পোজিট নামক গার্মেন্টসে হামলা চালিয়ে এবং আগুন দিয়ে প্রায় সবকটি ফ্লোর পুড়িয়ে দেয়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ১২০ কোটি বলে জানিয়েছেন গার্মেন্টসের মালিক মোঃ শাহাবুদ্দিন।
এছাড়া কোটা আন্দোলনে টানা ৫ দিন বন্ধ থাকার রপ্তানীমূখী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলো বিপুল অংকের ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে বলে জানিয়েছে বিকেএমইএ।
জানা গেছে, কোটা আন্দোলনের ফলে টানা ৭দিন (১৮-২৪ জুলাই) বন্ধ থাকার পর কারফিউ শিথিল হলে গার্মেন্টস সেক্টর উৎপাদন শুরু হয়। ফতুল্লার বিসিক, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড, কাঁচপুর শিল্প এলাকাসহ আশপাশে ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে পুরোদমে কাজ চলছে। তবে এই ৭ দিনের বন্ধে ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বেশ উদ্বিগ্ন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।
ফতুল্লা বিসিকের কয়েকজন গার্মেন্টস মালিক জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগে নাশকতাকারীরা নারায়ণগঞ্জে যে সহিংসতা করেছে তা নজিরবিহীন। সরকারী-বেসরকারী, আইন-শৃংখলা বাহিনী, গার্মেন্টস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মার্কেট, পার্ক, সিনেমা হল, সাংবাদিক কেউ বাদ যায়নি। সহিংসতার কারনে আমাদের গার্মেন্টসে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। টানা ৭ দিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় সময়মতো বায়ারদের অর্ডারের কাজ শেষ করতে পারিনি। অনেক ফ্যাক্টরীর শিপমেন্ট আটকে গেছে।
শিবুমার্কেট এলাকার পানামা নীট গার্মেন্সসের মালিক জাকির হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই কয়েকদিনে গার্মেন্টস বন্ধ থাকায় শুধু আমার ফ্যাক্টরীর কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। নাশকতার কারনে শ্রমিকরা আসতে না পারায় ফ্যাক্টরী বন্ধ রাখতে হয়েছে। শহরে ও লিংকরোডে রাস্তার দুপাশে কোন প্রতিষ্ঠান নাশকতাকারীদেও হাত থেকে রক্ষা পায়নি। ১৮ জুলাই সংসদ সদস্য শামীম ওসমান মাঠে নামায় নারায়ণগঞ্জ প্যালেষ্টাইন হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।
নাশকতাকারীদের হামলায় সবচে ক্ষতিগ্রস্থ এসবি ফ্যাশন এন্ড কম্পোজিট নামক গার্মেন্টসের মালিক শাহাবুদ্দিন জানান, সংঘর্ষের সময় আমার গার্মেন্টেসের নিচে এসে একদল পুলিশ পানি চেয়েছিলো। আমাদের আনসাররা তাদের পানি পান করিয়েছিলো। এই আক্রোশে পরবর্তিতে আমার ফ্যাক্টরীর প্রবেশ গেইট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে নিটিং, ফিনিশিং ও গোডাউনে হামলা চালায় নাশকতাকারীরা। সবকিছু পুড়িয়ে দেয় তারা। এতে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমাদের সাংসদ শামীম ওসমানসহ গার্মেন্টস সেক্টরের নেতৃবৃন্দ গার্মেন্টস পুরিদর্শণ করেছেন।
দেশের নিট গার্মেন্টস মালিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি সহ-সভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল জানান, ‘কোটা আন্দোলনে ৫ দিনে এ সেক্টরের মোট ক্ষতির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় তবে আমাদের মালিকানাধীন আর এস শিল্প গ্রুপের ক্ষতির পরিমাণ বললে অনুমান করা যাবে।
তিনি বলেন, ৫ দিনে শ্রমিকদের মজুরি হিসাব করলেই আমার দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। কারণ উৎপাদন বন্ধ ছিল কিন্তু তারচেয়েও বড় ক্ষতি বায়াররা এই সহিংসতা আর তা-বে ভীত, আমরা সময়মতো শিপমেন্ট দিতে পারব কিনা। বাজারের প্রতিযোগিতায় আমাদের বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অন্য দেশের শিল্প মালিকরাও তৎপর রয়েছে। নানা দিক দিয়েই আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সন্দিহান।