রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামে আবারও দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েকদিনের হামলায় এখন পর্যন্ত ছররা গুলিবিদ্ধ হয়েছে ২১জন। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রফিক বাহিনীর হামলায় শিশুসহ আরো ৫ জন ছররা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এসময় আরো প্রায় ২২ জন বিভিন্ন ভাবে আহত হয়েছেন।
জানা যায়, রফিক বাহিনীর প্রধান রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই মিজানুর রহমানের নেতৃত্ব শনিবার জসু, আলেক, শাহ আলম, এমদাদুল, রহমান, নাজমুলসহ প্রায় ১৫০ জন সন্ত্রাসী নাওড়া গ্রামে হামলা করে। এসময় তারা কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মোতালেব ভূঁইয়ার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে হামলা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীদের হাতে দেশি-বিদেশি পিস্তল, রামদা, চাইনিজ কুড়ালসহ ধারালো অস্ত্র ছিল।
সূত্র জানায়, এই হামলার ঘটনায় ৫ জন ছররা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য জাকির হোসেন জাগু পিতা আবুল পাশা, আবুল হোসেন পিতা মৃত শাহাবুদ্দিন, মোহাম্মদ আল-আমিন পিতা মনির হোসেন, মারুফা আক্তার পিতা নজরুল ইসলাম, ১১ বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদ জুম্মন হোসেন পিতা মোজাম্মেল। আহতদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ প্রসঙ্গে আহত জাকির হোসেন জাগুর পিতা আবুল পাশা বলেন, রফিক বাহিনীর প্রধান রফিকের ছোট ভাই মিজানের নেতৃত্বে সন্ধ্যায় প্রায় ১৫০ জন সন্ত্রাসী আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার ছেলেকে গুলি করে। সে আহত হয়ে পড়লে তার মাথায় আঘাত করা হয়।
কেন বার বার আপনাদের উপর হামলা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জমি দখল করতে সন্ত্রাসীরা একজোট হয়েছে। তারা আমাদের এলাকা ছাড়া করে জমির দখল নিতে চায়।
অতর্কিত হামলায় ছররা গুলিবিদ্ধ শিশু মোহাম্মদ জুম্মন হোসেনের বাবা মোজাম্মেল আর্তনাদ করতে করতে বলেন, আমার ১১ বছর বয়সী ছেলেটার কি দোষ? হঠাৎ করে রফিকের সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ঢুকে গুলি চালায়। আমার ছেলের পুরো শরীর রক্তে ভিজে গেছে।
তিনি বলেন, রফিক জমি দখল করতে গত ১০-১২ দিনে আমাদের গ্রামবাসীর উপর চার দফায় হামলা করেছে। আমাদের অনেকে এখনও আহত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছে। এখন আবারো হামলা করেছে। এই গ্রামের কাউকে বাঁছতে দিবে না সে।
ছররা গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, গত কয়েক বছর যাবত রফিক বাহিনীর সদস্যরা আমাদের উপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার করছে। সম্প্রতি তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নাওড়া মধ্যপাড়ার মোতালেব ভূঁইয়া ও প্রধানের বাড়ির কাউকে একা ফেলেই কারণে অকারণে মারধর করে।
তিনি বলেন, আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সন্ত্রাসীরা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার পা অবশ হয়ে যায়। দৌড়ও দিতে পারছিলাম না। পরে দেখি পা দিয়ে রক্ত পড়ছে।
কায়েতপাড়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, পূর্বাচলের নিকটবর্তী হওয়ায় কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জমি দখল করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। গত শুক্রবার কায়েতপাড়ায় উপস্থিত হয়ে প্রকাশ্যে ভুক্তভোগীদের মেরে এলাকার ছাড়া নির্দেশ দেয় তিনি। এ সময় জনসম্মুখে তাদের বাড়িঘর ভেঙে সব জায়গা জমি দখলে নেওয়ার ঘোষণা দেন রফিক।
তিনি বলেন, রফিক বাহিনীর ভয়ে অনেক পরিবার এখন গ্রাম ছাড়া। গত তিন বারের হামলার ঘটনায় আহত অনেকই এখনো গ্রামে ফিরে আসে নাই। তাই তারা কয়েকদিন পর পর হামলা করছে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একই পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে জরুরি বিভাগে আসে। বর্তমানে জরুরি বিভাগের অবজারভেশনে তাদের চিকিৎসা চলছে। দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশকে জানিয়েছি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২৯ জানুয়ারি দুই দফায় রফিক বাহিনীর হামলায় নাওড়া গ্রামের ৮ জন ছররা গুলিবিদ্ধ হয়। ওইসময় নারী-শিশুসহ ১৩ জন আহত হয়।
এদিকে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আবারো নাওড়া গ্রামে হামলা করে রফিক বাহিনী। ওইদিন ৮ জন ছররা গুলিবিদ্ধসহ ১৬ জন আহত হয়।