রাজধানীর লাগোয়া নারায়ণগঞ্জ জেলার কেউ মন্ত্রী সভায় ঠাই পায়নি। ৭ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্চনে জেলার ৪টি আসনে নৌকা এবং একটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত মেয়াদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ছিলেন সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে মন্ত্রী সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলার কোন সংসদ সদস্য ঠাই পায়নি। ফলে এ জেলাটি বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে মন্ত্রী তালিকায় ঠাই করে নিতে পারলে, ওই সংসদ সদস্যের হাত ধরে জেলায় উন্নয়ন করা সম্ভব। আর তাতে করে অন্য জেলার তুলনায় এখানে বেশি উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব। তবে এবার আশানুরূপ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের জন্ম জেলা নারায়ণগঞ্জ।
আরো পড়ুন: বুধবার শপথ নেবেন নারায়ণগঞ্জের বিজয়ী ৫ এমপি
গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নারায়ণগঞ্জ জেলার কোন সংসদ সদস্য ঠাই পাননি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালে নারায়ণগঞ্জ জেলায় মন্ত্রীত্বের স্বাদ পায়নি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান গোলাম দস্তগীর গাজী। আর তাতে আশায় বুক বাঁধে নারায়ণগঞ্জবাসী। নানা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তারা। তবে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে রূপগঞ্জবাসীর। সেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সে দিক থেকে পিছিয়ে আছে নারায়ণগঞ্জ শহর অঞ্চল।
বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনে দাবি শীতলক্ষ্যা সেতু। যদিও বন্দরের কয়লা ঘাট দিয়ে নাসিম ওসমান সেতু নির্বাণ করা হয়েছে। তবে বন্দরবসাী একাধিক সেতুর দাবি করে আসছেন। বিশেষ করে বন্দর ১ নং খেয়া ঘাট বা তার আশেপাশে দিয়ে সেতু নির্ণানের দাবি জানিয়ে আসছে। এখনো সেই দাবি পুরণ হয়নি।
আরো পড়ুন: শামীম ওসমানকে মন্ত্রী চান না.গঞ্জবাসী
এখানে উল্লেখ্য যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য বিজয়ী হয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সদংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মন্ত্রীত্ব ধরে রাখতে পারেন নি। ২০০৮ সাল থেকে টানা চার বার তিনি সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন।
চার বাবের মতো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এ কে এম শামীম ওসমান। তিনি এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯৯৬ সালে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত সময়ে তাকে মন্ত্রীসভায় রাখতে চেয়েছিলে বলে দাবি করেছেন এই সংসদ সদস্য। তবে তিনি মন্ত্রী সভায় থাকতে রাজি হননি বলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রায় সময় বক্তব্য দিয়ে আসছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ জনসভাটি নারায়য়ণগঞ্জে হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মেট্রোরেল নিয়ে নানা দাবি করতে দেখা যায়। সেই দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ দিয়ে তিনটি মেট্রোরেল চলাচলের ঘোষণাও দিয়েছেন। ফলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সংসদ সদস্য মন্ত্রীত্ব পেলে জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব। কিন্তু সে দিক থেকে নারায়ণগঞ্জবাসী বঞ্চিত হয়েছে।
টানা চার মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন নজরুল ইসলাম বাবু। তিনি এক সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। ফলে কেন্দ্রের তার বেশ দাপট রয়েছে। এছাড়া একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি আহত হয়েছিলেন। ফলে তিনিও বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে আনতে পারতেন। তার হাত ধরে উন্নয়নের পালে আরও হাওয়া লাগতে পারতো। কিন্তু শেষ সময়ে এসে সে দিক থেকে বঞ্চিত হয়েছে।