ওসমানী ষ্টেডিয়ামে করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সারি সারি চেয়ার রাখা হয়েছে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রবীন রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, আলেম-ওলামা, শিক্ষক মন্ডলীর জন্য। মঞ্চের সামনে প্রথম সারীতে সরকারী কর্মকর্তা ও আইন- শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক, ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষক মন্ডলী, ছাত্র-ছাত্রী. রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দর জন্য সোফা ও প্রায় ২০ হাজার চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য। এখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুল আলোচিত মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, ইভটিজিং, ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে সূধী সমাবেশ।
প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আহ্বানে বিকেল ৩টার মধ্যেই সমাবেশ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। সূশৃংখল পরিবেশে ক্লীন নারায়নগঞ্জ গড়ার প্রত্যাশায় সমাবেশটি হয়ে উঠেছিলো উৎসবমূখর। যথাসময়ে সমাবেশ শুরু হলেও সামনের সারিতে সরকারী কর্মকর্তা ও আইন- শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের বসার স্থানটি প্রথমে খালি রাখা হয়েছিলো। পরে কেউ না আসায় সেখানে অন্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আলেম সমাজ, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিল মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইপটিজিং, ভূমিদস্যু প্রতিরোধে আয়োজিত মতবিনিময় সভায়। শুধু দেখা মিলেনি পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কাউকে।
সমাজের অপরাধ নিমূলের এই আয়োজনে উপস্থিত না থাকায় দপ্তর দু’টির অবস্থান নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও নানা প্রশ্ন তুলেছেন বক্তারা।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের আহ্বানে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ইসদাইরের ওসমানি স্টেডিয়ামে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেখান থেকে আগামী ১ মাসের মধ্যে জেলার মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, ভূমিদস্যুতা বন্ধে গুরুত্বপর্ণ দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সমাবেশে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কেউকে না দেখে সবার প্রথমেই প্রশ্ন তুলে নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, আজকে আমার চেয়ে ছিলাম- সমস্য গুলো তুলে ধরবো, সমাধানের পথ বের করবো। অনেক গুলো সমস্যার কথা এই মতবিনিময় সভায় উঠে এসেছে, আমরা আশা করতেই পারি শামীম ওসমানের হাত ধরে সমাধানও হবে। কিন্তু সমাধানের জন্যে আমাদের পাশে যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেই পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কাউকে দেখছি না।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশে মাদক বিক্রির ঘটনা গুলো তুলে ধরে বলেন, মাদককে প্রশ্রয় দিচ্ছে কারা। মাদককে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে কিন্তু এ গুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেই কেন।
নারায়নগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দীপু বলেন, নারায়নগঞ্জ থেকে মাদক নির্মুল করতে হলে আইনজীবীদের কথা দিতে হবে, আমরা কোন মাদক ব্যবসায়ীর পক্ষে মামলা লড়বো না। মসজিদের ইমাম সাহেবদের প্রতি জুম্মায় মাদকের কুফল সম্পর্কে বলতে হবে। শিক্ষকদেরর ক্লাস শুরুর আগে ২ মিনিট করে হলেও এনিয়ে বলতে হবে।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান সময়ে মাদক নির্মুলের মতো কঠিন কাজ আর একটিও নেই। সরকার প্রধাণ থেকে শুরু করে সবাই মাদক নির্মুলে জিরো ট্রলারেন্সে ঘোষনা করেছেন। কিন্তু আজকে এখানে প্রশাসনের কেউ নেই দেখে হতাশ হয়েছি। শামীম ওসমান যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার সাথে আমরা ব্যবসায়ী সমাজ পাশে আছি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল বলেন, আজকে এখানে সকল শ্রেণী পেশার নেতৃস্থানীয়রা উপস্থিত আছেন। আমরা সকলেই মাদকমুক্ত নারায়নগঞ্জ চাই। কিন্তু আমরাতো আইনকে হাতে তুলে নিতে পারবোনা। এজন্য প্রশাসন লাগবে। আজকে কেন নারায়নগঞ্জের প্রশাসনের কোন লোক এখানে নেই। এর জবাব সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের কাছে আমরা চাই।
নারায়নগঞ্জ চেম্বারের পরিচালক ইমতিনান ওসমান অয়ন বলেন, আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আপনারা মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী নির্মুলের এই সমাবেশে এসে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এই আয়োজন করায় আমার বাবাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে এই উদ্যোগটি আরো ২/৩ বছর আগে নিলে আজকে মাদকের ভয়াবগ পরিস্থিতি দেখতে হতোনা। এখানে যারা উপস্থিত আছেন সবাই আমার মুরুব্বী। আপনারা নির্দেশ দিবেন, যতটুকু দায়িত্ব পালন করতে হয় যুব সমাজ ছাত্র সমাজ করতে প্রস্তুত আছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেন, আজকে এটা কোন রাজনৈতিক সমাবেশ না। আমাদের নেতা শামীম ওসমান আমাদের ডেকেছেন, আমরা এসেছি। নারায়নগঞ্জের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এখানে এসেছেন। শুধু প্রশাসনের কেউ আসেনি। তাহলে আমরা কি ধরে নেবো ওনারা, মাদকমুক্ত নারায়নগঞ্জ চান না।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দন শীল বলেন, মাদকের কারণে সমাজে আজ সকল অপরাধ। মাদক কমলে অপরাধও কমে যাবে। আমরা এমপি শামীম ওসমানের ডাকে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।
জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সমালোচনা করে জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ঐক্য পরিষদের সভাপতি এতেশামুল হক জানান, আপনারা ভালো ভালো চেয়ারে বসে আছেন, আপনারাতো প্রশাসনের কাজ করেন, সমাজকে ভালো রাখার চেষ্টা করেন, আপনাদের চেষ্টা দেখতে দেখতে কিশোর গ্যাং আর মাদক সেবনকারীদের জন্য এখন ফজরের নামাজের সময় মসজিদে যেতে ভয় হয়।
মতবিনিময় সভার আয়োজক ও সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের কাছে প্রশ্ন রেখে নারায়ণগঞ্জ জজ আদালতের পাবলিক পসিকিউটর (পিপি) এড. মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল কি না? আর দাওয়াত দেওয়া হলে সে আসলো না কেন? আমি এমপি সাহেবের কাছে জানতে চাই।
তার প্রশ্নের উত্তরে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে একেএম শামীম ওসমান বলেন, আমি জেলা প্রশাসককে একবার বলিনি, বারবার বলেছি। আমার নাম শামীম ওসমান, আমি কারো দয়ায় চলি না। রাত ১২ টার সময় ৫ লাখ লোক নামানোর ক্ষমতা শামীম ওসমান রাখে, ইনশাআল্লাহ। নামার পর যদি জনগণ বলে আমরা কাউকে এখানে চাইনা, তাহলে কিন্তু কারও এখানে থাকার উপায় নেই। আগের মেজাজ থাকলে এখনি বলে দিতাম। বয়স হয়েছে ৬২, তাই বাষট্টি হিসেবে বক্তব্য দিলাম ২৬ বানায়া দিয়েন না কিন্তু। সাবধান থাকবেন সবাই।