জানা যায়, সাত খুনের মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের আদেশ দেন।
পরে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে অন্যান্য আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
নিন্ম আদালত থেকে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সন্তোষজনক হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। তবে আপীল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন নিহতের স্বজনরা। সেই সাথে সাজার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবী জানান তারা।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় জেলে বসে কলকাঠি নাড়ছে। তাদের প্রভাব এখনো এলাকায় রয়ে গেছে। এদিকে আপিল বিভাগে মামলাটি দ্রুত নিস্পত্তি না হওয়ার ফলে নিহতদের পরিবার সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুর বেগম বলেন, দশ বছর ধরে বিচারের আশায় বুক বেধেঁ আছি। কিন্তু বিচারের তো পাচ্ছিনা। বিচার চাইতে চাইকে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এই মামলাটি আপিল বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। আমরা চাই মামলার রায় বহাল রেখে মামলাটি দ্রুত নিস্পত্তি করা হোক। এবং এই মামলার রায় কার্যকর করা হোক।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাবে মামলাটি চলমান রয়েছে। প্রত্যাশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাতজন অপহৃত হন। অপহরণের তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন।