একটি ব্রিজের অভাবে গত দেড় মাস ধরে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়ে আসতে হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকাসহ কয়েকটি এলাকার জনসাধারণকে। এর আগে পথচারী নিয়ে ডিএনডি খালে ভেঙ্গে পড়ে যাওয়া ব্রিজটি এখনো বেহাল অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। এদিকে ওই ব্রিজটি পুনরায় সংস্কার করা সম্ভব না হওয়ায় ওই স্থানে নতুন করে আগের মতোই সাড়ে ২২ লাখ টাকায় আরেকটি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। কিন্তু ডিএনডি খালের দূষিত পানিতে এই ব্রিজটি আবারও ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কা থাকায় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে নাসিক। বর্তমানে তারা এখানে আরসিসি ঢালাই দিয়ে আধুনিক ব্রিজ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে একটা প্রস্তাবনা তারা জাইকার হাতে দিয়েছে। জাইকা থেকে এটি অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে বলে জানা যায়। তবে এটি সময়সাপেক্ষ বিষয় হওয়ায় আপাতত ঈদের আগে বিকল্প ব্রিজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ারুল ইসলাম।
এলাকাবাসীর দাবি, এই ব্রিজের দুই প্রান্তে রয়েছে মার্কেটসহ শত শত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এখানে মানুষ জনের কোনো চলাচল নেই। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এখানকার আশেপাশের ছোট বড় ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা। এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি পথচারী নিয়ে ব্রিজটি ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়।
এদিকে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্রিজটি বর্তমানে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ব্রিজ না থাকায় দুইপাশের ব্যবসায়ীদের অনেকটাই অলস সময় পার করতে হচ্ছে। মানুষের চলাচল কম থাকায় ব্যবসায়িকভাবে তাদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর যাবত ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটিতে মানুষ চলাচল করে আসছিল। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেতুটি সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। একপর্যায়ে গত বছরের আগস্ট মাসের ১৩ তারিখ সেতুটিতে কয়েকটি পিলার ভেঙ্গে গেলে নাসিক ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ারুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে সেতুটি সাময়িকভাবে সংস্কার করা হয়েছিল। সংস্কারের কয়েকমাস ভালো গেলেও গত কয়েকদিন ধরেই ব্রিজটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন থেকে ব্রিজটি যেকোনো সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। পরবর্তীতে গত ১৭ জানুয়ারী কয়েকজন পথচারী নিয়ে ভেঙ্গে খালে পড়ে যায়। এতে কেউ গুরুতর আহত না হলেও প্রাণহানী থেকে বেঁচে যান পথচারীরা।
হাজী আহসানউল্লাহ মার্কেটের ব্যবস্থাপক এবং হীরাঝিল আবাসিক এলাকার সভাপতি গোলাম মো; হাবিবুল্লাহ বলেন, এর আগে আমরা নিজেদের অর্থায়ণে একাধিক ব্রীজ করেছি। কিন্তু এটি ডিএনডি প্রকল্প হওয়ার কারণে আমরা কাজ করতে পারছিনা। সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদেরকে এই ব্রীজটি দ্রুত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী এএসএম মশিউর রহমান বলেন, ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ার অনেক মানুষেরই পারাপারে কষ্ট হচ্ছে। এ বিষয় মেয়র মহোদয় অবগত রয়েছেন। এরই মধ্যে ব্রিজ নির্মাণের জন্য সাড়ে ২২ লাখ টাকার একটা বাজেট ধরি। তবে মেয়র মহোদয় চাচ্ছেন এখানে আধুনিক মানের একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যেনো ব্রিজটি দীর্ঘদিন টেকসই হয়। সেই লক্ষ্যে আমরা জাইকার কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। তারা যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু হবে। তবে কতদিন লাগতে পারে তা এই মুহুর্তে বলা সম্ভব না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নাসিক থেকে যে ব্রিজটি নির্মাণ করা হবে তা কতদিন লাগবে তা আমি বলতে পারছি না। তাই আপাতত চেষ্টা করছি ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় সাময়িকভাবে চলাচল করার ব্যবস্থা করে দেওয়ার।
এর আগে এলাকাবাসীর চলাচলের সুবিধার্থে এবং শিমাইল মোড়ের মার্কেটগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ১২ বছর পূর্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তখন থেকে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। ব্রিজটিতে বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকতো। এছাড়া খাল পারাপারের জন্য কাছাকাছি কোনো ব্রিজ না থাকায় আশেপাশের ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল এই ব্রিজটি দিয়ে আনা নেওয়া করতো।