নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাধীন টাগারপাড় এলাকায় বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় সোমবার সকালে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হন তিতাসের লোকজন। হামলার জেরে ঐ এলাকাসহ আশেপাশের সকল এলাকার সম্পূর্ণ গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেয় তিতাস। ফলে ২ দিন ধরে গ্যাস না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে এলাকাবাসী। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলছে, এক বাড়ির সাথে সৃষ্ট সমস্যাকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার বাড়ি-ঘরের গ্যাস বন্ধ রাখা এটা কেমন বিচার?
জানা গেছে, টাগারপাড়ের একটি বাড়িতে গ্যাসের প্রায় ৫ লাখ টাকা বকেয়া বিল জমে। এই টাকা পরিশোধ না করায় সোমবার সকালে ঐ বাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যায় তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় বাড়ির মালিক ও তাদের ছেলেদের সাথে বাক-বিতন্ডা হয় তিতাসের লোকজনদের। এক পর্যায়ে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হামলা চালিয়ে তাদেরকে মারধর করা হয় বলে জানায় তিতাস। তিতাস কর্তৃপক্ষ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ও ফতুল্লা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের টাগারপাড়, বৃহত্তর ইসদাইর, গাবতলী, কাপুইরাপট্টিসহ আশেপাশের সকল এলাকার গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয়রা বলছে, গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যাওয়ায় যারা হামলা ও মারধর করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক, এটা সকলেই চায়। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঐ এলাকাসহ আমাদের এলাকা (গাবতলী) ও আশেপাশের সকল এলাকার গ্যাস লাইন বন্ধ রাখা চরম অমানবিক কাজ। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক লোককে এভাবে ভোগান্তিতে ফেলা উচিৎ নয়। তিতাসের এমন কান্ডে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এসব এলাকার মানুষ।
গাবতলী এলাকার গৃহিনী সুরাইয়া নাসরিন অভিযোগ করে বলেন, আমার বাড়িতে ১৮টি গ্যাসের সংযোগ আছে। আমাদের গ্যাসের বিলের এক মাসেরও বকেয়া নেই। অথচ গত ২ দিন যাবৎ গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখে আমাদেরকে অবর্ননীয় কষ্টে ফেলা হয়েছে। শুনেছি, টাগারপাড়ে নাকি বকেয়া বিল না দেয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে তিতাসের লোকজন হামলার শিকার হয়েছে। দোষিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক, কিন্তু একটি বাড়ির কারণে সাধারণ মানুষদের কষ্ট কেন দেয়া হচ্ছে?
এ বিষয়ে এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার কামরুল হাসান বলেন, আমার ওয়ার্ডের আমেনা গার্মেন্টেসের সামনে দিয়ে আমার এলাকা হয়ে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের টাগারপাড় সহ আশেপাশের এলাকায় গ্যাস লাইনটি গিয়েছে। টাগারপাড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ায় তিতাস কর্তৃপক্ষ মূল গ্যাস লাইনটি বন্ধ করে দেয়। এতে টাগারপাড়সহ আমার ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকা ও ফতুল্লা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকার সকল গ্যাস বন্ধ হয়ে যায়। একটি বাড়ির জন্য সমগ্র এলাকাবাসীর গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেয়া যৌক্তিক কিনা জানতে চাইলে তিতাসের ম্যানেজার মশিউর রহমান আমাকে বলে, আমাদের এখতিয়ার আছে, তাই আমরা বন্ধ করেছি। পরে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদেরকে তিতাসের মতিঝিল কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে আমরা বিষয়টি অবহিত করলে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তিতাসের ম্যানেজার মশিউর রহমানকে ফোন দিয়ে গ্যাস লাইন পুনরায় চালু করতে বলেন। একইসাথে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিতাসের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের ডিজিএম মামুন আর রশিদ বলেন, বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে আমাদের কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে মারধর করাসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও রাষ্ট্রীয় মালামাল লুট করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের সকল এলাকার গ্যাস লাইন বন্ধ করা ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐ এলাকার সকল বাড়ির বিল বকেয়া আছে। তাই পুরো লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দার বাড়িতে ১৮টি গ্যাসের লাইন আছে এবং তার ১ মাসেরও বকেয়া বিল নেই এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে। তাহলে ঐ ব্যক্তির বাড়ির লাইন কেন বন্ধ থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা হতেই পারে। কারণটা হলো, কোনো কাজ করতে গেলে ২/১জন ভালো মানুষ যারা নিয়মিত বিল দেয়, তাদেরও ঝামেলা একটু পোহাতে হতে পারে। কারণ ওয়ান বাই ওয়ান চেক করে তো করতে পারবো না। এটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। কবে নাগাদ এই লাইন চালু করা হতে পারে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বকেয়া বিল আদায় হলেই লাইন চালু করে দিবো।
খবরটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুকে পড়ার সুযোগ করে দিন