এক সময়ের রিকশা-ভ্যান চালক নেতা থেকে রাজনীতিক প্লাটফর্ম বদল করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে পদার্পণ করে বেশ জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছেন। বিএনপিতে দীর্ঘদিনের রাজনীতিক ক্যরিয়ারে বিশাল একনিষ্ঠ নেতাকর্মী তার উপর আস্থা রেখেছে। একের পর এক জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদ ছিল তার দখলে। বিএনপি দলটি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদও পেয়েছিলেন। এরপর বিএনপি দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করে অনেকটা চমক দেখিয়ে দলটির মহাসচিব পদ পেয়ে যান। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হন। সবশেষে তৈমুর বলতে বাধ্য হয়েছেন, এ দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব নয়।
এতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘মজলুম জননেতা হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার রাজনীতিকে কুলকিনারা পাচ্ছেনা। তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তার ভরাডুবি হয়েছে। নৌকার ধাক্কায় তিনি ধরাশায়ী হয়েছেন।
দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, এক সময় রিকশা-ভ্যান চালকদের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিল আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার। পরে ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এরপর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ শীর্ষপদে একাধিকবার ছিলেন। বিএনপির চেয়ারর্পাসনের উপদেষ্টা পদের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। সে সময় মজলুম জননেতা হিসেবে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। শেষ মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী তখন আলোচনায় এসেছিলেন। ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে লড়াই করে পরাজিত হয়েছেন। সেই নির্বাচনটি বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দিলেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। ফলে ওই সময় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর দীর্ঘ দেড় বছর পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসে তিনি তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করে মহাসচিব পদ পেয়েছেন।
এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশব্যাপী প্রার্থী দিয়েছেন তৃণমূল বিএনপি মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে পরাজিত হয়েছেন তিনি। নির্বাচনে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ৪৫ হাজার ৭৫ ভোট পেয়েছেন কেটলি প্রতীকের শাহজাহান ভূইয়া। সোনালী আশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও দলটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার পেয়েছেন ৩ হাজার ১৯০ ভোট। ১২৮ কেন্দ্রে এই ভোট পড়েছে।
নির্বাচনে আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালানোর বিষয়ে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, বিএনপি ও তৃণমূল বিএনপির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বিএনপির নেতাকর্মীরা আমার সাথে হাটছে, তারা আমার পক্ষে নির্বাচনে কাজ করছে। আজকে রূপগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মী ধরপাকড় বন্ধ রয়েছে আমার জন্য। আমার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটা হয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন, এখানে সুষ্ঠু ভোট হবে। আর আমি যেহেতু একটা দলের মহাসচিব সেহেতু মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর এখানে থাকবে। তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস, রূপগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
তবে নির্বাচনে পরাজয়ের পরে বক্তব্য পাল্টে ফেলেন তৈমুর আলম খন্দকার। নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি বলে দাবি করেছে তৈমুর। গত ১০ জানুয়ারি দুপুরে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে পরাজিত প্রার্থী ও তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আমরা এরকম সাজানো নির্বাচনে আর যাবো না। আমরা তৃণমূল বিএনপির সব প্রার্থী ও চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবো। এই নির্বাচন হয়েছে গভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট। নৌকাও গভমেন্ট স্বতন্ত্রও গর্ভমেন্ট। মনে হচ্ছে, দেশটা এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। তবে তৃণমূল বিএনপি রাজনীতি করবে।
দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি ইউনিয়নের প্রচারণা করতে গিয়ে দেখেছি, নারীরা বলেছে, টাকা দিয়ে যান টাকা দিলে ভোট দিবো। এই দেশে এই সময়ে আমি মনে করি, সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আগামী প্রজন্মও পারবে না। তৃতীয় প্রজন্ম যদি চেষ্টা করে ঠিক করতে পারবে। যারা সরকারে আছে তারা মনে করে, তারা হেরে গেলে জেলে যেতে হবে। এদেশের সিস্টেম এরকমই হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এই নেতা তৃণমূল বিএনপিকে খড়কুটো হিসেবে আকড়ে ধরেছিলেন। তবে তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টি বিএনপি নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারেনি। তাকে বেঈমান আখ্যা দিয়েছেন। আর তাতে তৈমুরের রাজনীতিতে ধ্বস নামে। তা প্রমাণিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। আর তাতে করে তৈমুরের রাজনীতিতে শেষ পেরেক ঢুকানোর কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।