দীর্ঘ ৭ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির স্থায়ী কোন কার্যালয় নেই। অস্থায়ী কিংবা ব্যক্তিগত নানা চেম্বারে চলছে নামকাওয়াস্তে কার্যক্রম। তবে সে দিকে নেতাদের খুব একটা খেয়াল নেই। তারা উল্টো মামলা-গ্রেফতার আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসলেও নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কোনো স্থায়ী কার্যালয় করতে পারেননি দলের সেই সময়ের এমপি-মন্ত্রীরা। ২০০৯ সালে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃত্বে আসার পর তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা থেকে দোকান হিসেবে ইজারা নিয়ে ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় বিএনপির একটি কার্যালয় করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওই কার্যালয়েই বিএনপির কার্যক্রম চলে। তৎকালীন দায়িত্বে থাকা নেতারা সেই কার্যালয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। সেইসঙ্গে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকতো কার্যালয়টি।
পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কার্যালয় নিয়ে মামলায় হেরে যাওয়ার পর ২০১৭ সালের ১০ মার্চ বিএনপির কার্যালয় ভবন ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নতুন করে আর কার্যালয় নিতে পারেনি। এরইমধ্যে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বিদায় নেন। জেলা বিএনপির নতুন নেতৃত্বে আসেন সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। একইভাবে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম এবং সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল।
তাদের এই কমিটির মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কার্যালয়ের বিষয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা পরিলক্ষিত হয়নি। মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শহরের চারারগোপ এলাকার ফ্রেন্ডস মার্কেটে তার নিজ বাসার একটি ফ্লোরকে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। তবে জেলা বিএনপির শহরে বসার মতো কোনো কার্যালয় ছিল না।
আরো পড়ুন: পাঁচ মাস হাসপাতাল থেকে বাসার ফিরছে খালেদা জিয়া
এদিকে, কার্যালয় না থাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরমুখী হয়ে পড়েন। দলীয় কোনো কর্মসূচিতেই তাদের রাজপথে দেখা মিলতো না। এরপর নেতাকর্মীদের রাজপথে ফেরাতে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন। আর এতে আহ্বায়ক করা হয় অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে এবং সদস্য সচিব করা হয় অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে।
অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘর থেকে বের হয়ে রাজপথে ফেরেন। কিন্তু অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্ব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পরে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর ওই কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সদস্য সচিব করা হয় গোলাম ফারুক খোকনকে। সেইসঙ্গে চলতি বছরের ১৭ জুন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম ফারুক খোকনের নাম ঘোষণা করা হয়।
এর আগে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. শাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব হিসেবে অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদে থাকা নেতারা কেউই দলীয় স্থায়ী কার্যালয় নিয়ে কোনো কথা বলেন না। সবাই যার যার মতো করে নিজেদের অফিস কিংবা চেম্বারকেই দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। তাই তাদের স্থায়ী কোনো ঠিকানার আর দেখা মিলছে না।
জেলা বিএনপির কর্মসূচি পালন করা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অথবা সিদ্ধিরগঞ্জের সড়কে। আর সভাগুলো অনুষ্ঠিত হয় জেলার ও ঢাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। শহরের মূল সড়কে খুব কমই তাদের দেখা মেলে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের প্রশ্ন, বড় একটি দলে দলীয় কার্যালয়ে নেওয়ার মতো একজন নেতাও নেই?
মহানগর বিএনপির কার্যক্রম চলছে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেটের তৃতীয় তলায় অবস্থিত সাখাওয়াত হোসেন খানের ব্যাক্তিগত কার্যালয় এবং মিশন পাড়ায় অবস্থিত হোসিয়ারি সমিতিতে।
বিএনপির কার্যালয়টি নিয়ে এক সময়ে মামলা লড়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। যিনি বর্তমানে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব পদে রয়েছেন। তিনি বলেন, এ বিষয় নিয়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিলাম। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন আমাদের কার্যালয়টি দ্রুত বুঝিয়ে দেবে বলেছিল।
তবে এখন তিনি এই দলে নেই। ফলে কার্যালয় নিয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দদের মধ্যে তেমন কোন সাড়া-শব্দ নেই। উল্টো নাশকতার নানা মামলা নিয়ে তাদের ব্যস্ত সময় পার করতে শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেন না। সেখানে কার্যালয়ে কীভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করবো? আপাতত আমরা একটি অস্থায়ী কার্যালয় করেছি। সেখান থেকে দলীয় কর্মসূচি পরিচালিত হয়। আমরা চেষ্টা করছি স্থায়ী কার্যালয় করার জন্য।