এনএনডি টিভি: নারায়ণগঞ্জ থেকে মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, ভূমিদস্যুতা ও চাঁদাবাজি দূর করতে রীতিমত জিহাদ ঘোষণা করেছেন সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। এই লড়াইয়ে তিনি আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। একের পর এক নানা মিটিং ও সভায় এ বিষয়ে জোড়ালো বক্তব্য রাখছেন তিনি। তবে এবার এক মাসের মধ্যে এসব অপকর্ম নির্মূল করার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামবেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দীর্ঘদিনের বিশাল অপরাধ জগত এক মাসে ধ্বংস করতে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে এই সংসদ সদস্যকে। তবে এই চ্যালেঞ্জে জয়লাভ করতে পারলে অনায়াসে নারায়ণগঞ্জবাসীর মনের গহীনে জায়গা করে নিতে পারবেন শামীম ওসমান।
জানা গেছে, আগামী ২৭ জানুয়ারি শনিবার দুপুর আড়াইটায় ইসদাইরস্থ ওসমানি স্টেডিয়ামে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে এক মতবিনিময় সভার আহ্বান করা হয়েছে। সেই সভায় নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। এই সংক্রান্ত একটি নিমন্ত্রণ কার্ডের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনদের নিমন্ত্রণ করা হচ্ছে।
মূলত, এই সমাজে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও ইভটিজিং নামের যে ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে এর বিরুদ্ধে জনগণ ও সমাজকে সোচ্চার করে তোলাই হচ্ছে এই সংসদ সদস্যের উদ্দেশ্য। যেকারণে তিনি সর্বস্তরের ভালো মানুষদের উপস্থিতি, পরামর্শ ও মতামত প্রত্যাশা করেছেন। তাছাড়া বর্তমান সময়ে সমাজের ভাইরাস হিসেবে পরিচিত কিশোর গ্যাং মূলত মাদকের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য ছুড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে কিশোর গ্যাংয়ের কালো থাবা থেকে আমাদের সমাজ ও সন্তানদের বাঁচাতে হলে এসাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সেই সাথে অসহায় দুস্থদের চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সহযোগিতা করা হবে বলে ওই সভা থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৭ জানুয়ারি ওই সভা থেকে আগামী এক মাসের মধ্যে মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, ভূমিদস্যুতা ও চাঁদাবাজি নির্মূল করার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামবেন সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। ভেতরে ভেতরে এখন সেই প্রস্তুতি চলছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় সিনেমন রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভায় এই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন এমপি শামীম ওসমান।
ওই সভায় শামীম ওসমান বলেন, ‘‘আমরা যাষ্ট নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর করতে চাই। এমন একটা নারায়ণগঞ্জ দেখতে চাই যেখানে রাত ১২ টায় আমাদের মেয়েরা যেন নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে।’’ সেই লক্ষ্যে তিনি মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, ভূমিদস্যুতা ও চাঁদাবাজি দূর করার আহবান জানান।
এই মহৎ উদ্দেশ্যে সর্বস্তরের মানুষদের আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ সাংবাদিক, পলিটিশিয়ান ও শিক্ষক সমাজ যদি এক সাথে আগায় আমি বিশ্বাস করি, এক মাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের কোথাও মাদক বেচা সম্ভব হবে না। আমার মুখ যদি সত্য কথা বলে, আমার ক্যামেরা যদি সত্য কথা বলে ও কলম যদি সত্য লেখে তাহলে আমি বিশ্বাস করি আমাদের নারায়ণগঞ্জকে কলুষিত করার ক্ষমতা কারো নাই। এটা আমাদের নারায়ণগঞ্জ, এটা আমাদের জন্মভূমি আমরা এখানে মারা যাবো। সুতরাং চলেন আমরা সবাই সামনের দিকে আগাই। আমি প্রথম দাওয়াতটা প্রেসক্লাবকে দিলাম। তারা যদি সম্মতি দেয় তাহলে আগামী ২৭ তারিখ শনিবার একেএম সামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠে সমাজের সমস্ত ভালো মানুষগুলোকে নিয়ে মতামত নিবো। তাদের কথা শোনার পরে আমরা একটা সিদ্ধান্তে যাবো। তখন সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা এগোবো।
মাদক বিক্রি করতে কেউ সাহস পাবেনা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, প্রতিটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমরা প্রত্যাশা সংগঠনের ক্লাব করবো। এটার মধ্যে কোন রাজনীতি নেই। সবাই থাকবে। প্রথমে আমরা নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনে কাজ শুরু করবো। এই দুই আসনে ৮৪ টার মত ওয়ার্ড আছে। আমরা যদি প্রতি ওয়ার্ড থেকে এক হাজার করে লোক নেই তাহলে ৮৪ হাজার লোক হয়। ্এর সাথে তার পরিবারের সদস্যদের যোগ করলে চার লাখ লোক হবে। এরা যদি চায় নারায়ণগঞ্জে মাদক বিক্রি হবেনা, আমার তো মনে হয়না কেউ মাদক বিক্রি করতে সাহস করতে পারবে।
পুলিশ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিক্রির সাথে সমাজের বিভিন্ন দপ্তরের রথিমহারথি জড়িত রয়েছে। এলিট শ্রেণি থেকে শুরু করে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে এদের লোক রয়েছে। ফলে মাদক ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা এসব করে অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে। কারণ এদের শেল্টার দাতারা ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে ক্ষমতা ও অর্থের দাপটে ধরাকে স্বরা জ্ঞান করে চলছেন। এতে করে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছেনা। আর ভূমিদস্যুতার পেছনে বড় বড় ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান সহ প্রভাবশালীরা রয়েছেন। এমনকি এর পেছনে ক্ষমতাসীন দলের অনেক রাজনীতিক নেতারা রয়েছে। আর এসব অপকর্ম করা সহ সমাজে প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী বাহিনী বা কিশোর গ্যাং তৈরি করে থাকেন প্রভাবশালীরা। যা থেকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ইভটিজিংয়ের ঘটনার সূত্রপাত হয়। সমাজের প্রতিটি স্তরে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সমাজ থেকে এসব দূর করতে রীতিমত কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানকে।