নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে স্নেহের ছোট বোন সম্মোধন করে তাকে নিয়ে গোল টেবিল বৈঠকে বসতে চান সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের স্বার্থে সাংবাদিকদের গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজনে মেয়র আইভীকে উপস্থিত থাকার আহবান জানান এই সংসদ সদস্য। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে অনেকে সুযোগ নিচ্ছেন বলে প্রশাসনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন শামীম ওসমান। তবে এসব অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটমাট করে ঐক্যবদ্ধভাবে মেয়র আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান কাজ করতে পারলে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য সুভকর হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এতে করে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নমূলক কাজের গতি আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে আইভী-শামীমের মধ্যেকার দীঘদিনের দ্বন্দ্বকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে বক্তব্যে বলেছেন শামীম ওসমান। আর সেই কোন্দলের সুযোগে অনেকে নানা সুবিধা গ্রহণ করছেন। আর সেই কোন্দল নিরসন করতে মূলত গোল টেবিল বৈঠকে মেয়র আইভীর সাথে বসতে চান এই সংসদ সদস্য। যাতে করে কোন্দল মিটিয়ে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে এক হয়ে কাজ করতে পারেন। তাতে করে নারায়ণগঞ্জের ভবিষ্যত আরও সুন্দর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই সাংসদ।
গত ২৭ জানুয়ারি ইসদাইর ওসমানী স্টেডিয়ামে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান অতি শিঘ্রই গোল টেবিল বৈঠক করার আহবান জানিয়ে বলেন, প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের ভাইয়েরা উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে নারায়ণগঞ্জে অনেকে সুযোগ নিয়ে চলে যাচ্ছেন। যত দ্রুত সম্ভব আপনারা আলোচনা ডাকেন। ওই গোল টেবিলে বসবো আমি। কারণ আমিতো বলেছি আমি আরেকবার নির্বাচন না ও করতে পারি। আমার ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই। এটাই আমার দায়িত্ব আর আমি আল্লাহকে খুশি করে মরতে চাই। মৃত্যুর সময় আমার যেন ভয় না লাগে।
নারায়নগঞ্জের প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাওয়াত দিয়েছি। আমার কাছে সকল ভয়েস ম্যাসেজ আছে। ওনারা কেন আসতে পারেন নাই। নারায়ণগঞ্জের এলিট শ্রেণির সকলে এখানে আছেন। আমি আমার আদরের ছোট বোন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়রের মত করে বলতে পারবো না, প্রশাসন এখানে টাকা কামাতে আসে। এভাবে কথা বলাটা সঠিক হবেনা। তবে আমি বলতে চাই, সালাম ভাই বলেছেন-নারায়ণগঞ্জে গোল টেবিল বৈঠক হবে। আমি কথা দিচ্ছি, নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের যে অবস্থা, সেটা সমাধানে আমি থাকবো।
মেয়র আইভীকে আহবান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিম হায়াৎ আইভীকে আহবান জানাতে চাই। হয়তো তিনি আজকে কোন কারণে আসতে পারেন নাই। প্রেস ক্লাব যে আয়োজন করবেন সেই আয়োজনে আসেন। আইভী আমার অনেক ছোট, এছাড়া আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান আছেন, আমরা সবাইকে মিলে একটি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখে যাই। যাতে করে ভবিষ্যতে আমরা যখন থাকবোনা তারা যেন আমাদের জন্য দোয়া করেন। এটুকু অনুরোধ আমি আপনাদের জানাতে চাই।
ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ‘নির্বাচিত হবার পর প্রেস ক্লাবে এমপি শামীম ওসমান এসে বলেছেন, ফুটপাত উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু তার আগে তাদের পুনর্বাসন করেতে হবে। উনি মালয়শিয়ায়র কথা বললেন। সেখানে ফুটপাতের উপর দিয়ে রাস্তার কথা বলেছেন। নারায়ণগঞ্জেও ফুটপাতের উপর রাস্তা করলে মানুষদের চলাচলে সুবিধা হবে। যদি ৪ ও ৫ এর এমপিরা এবং সিটি কর্পোরেশন একসাথে বসে, তাহলে সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। অনেক সমস্যার সমাধান হবে। পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে মাদকমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা প্রকৃত সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে কাজ করবো।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দেয় সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের মধ্যে। সে সময় তাদের মধ্যে তুমুল বাকযুদ্ধও দৃশ্যমান হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমান ও আইভী অংশগ্রহণ করলে তুমুল বাকযুদ্ধ দেখা দেয়। সেই সময় থেকে তাদের মধ্যে এক ধরনের বিরোধ চলে আসছে। আর সেই বিরোধের আগুনে ঘি ঢালতে তৃতীয় পক্ষ। তবে সেই বিরোধের সুযোগে নানা মহল সুবিধা পাচ্ছে বলে চাউর রয়েছে। যেকারণে আজও সেই বিরোধ সমাধানের মুখ দেখেনি। তবে এবার গোল টেবিল বৈঠকের মধ্য দিয়ে সেই বিরোধ মিটমাটের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর বিরোধ মিটমাট হলে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। কারণে এক হয়ে কাজ করলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন কাজ নতুন করে গতি পাবে।
