এই সেই ভিডিও ক্লিপ। যেখানে পবিত্র কাবা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে শামীম ওসমান বলেছিলেন, প্রিয় নারায়ণগঞ্জবাসী, আপনাদের জন্য দেশবাসীর জন্য সকলের জন্য দোয়া করেছি। আপনারা দোয়া করবেন যাতে আমার হজ¦ কবুল হয়। এই কাবা শরীফ ছুয়ে ওয়াদা করেছিলাম নারায়ণগঞ্জ থেকে নিষিদ্ধ পল্লী উঠিয়ে দিবো। মহান আল্লাহ আমাকে কবুল করেছিলেন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার উছিলায়। আপনাদের কাছে আমি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, যে আপনারা দয়া করে ভালো মানুষগুলো যদি এগিয়ে আসেন তাহলে নারায়ণগঞ্জ থেকে মাদক সন্ত্রাস চাঁদাবাজী আমরা বন্ধ করতে পারি। পুলিশের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। আল্লাহ যদি আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসে আমি এব্যাপারে উদ্যোগ নিবো। এজন্য সকলের সহযোগীতা চাই। মুহুর্তেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। লক্ষ মানুষ এই উদ্যোগের সাথে একমত হয়ে কমেন্ট করেন।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণায় নেমেই নারায়ণগঞ্জের জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২০০ বছরের কলংক ছিলো টানবাজার পতিতাপল্লী। যেখানে নারীদের ইজ্জত বিক্রি হতো। এটাকে ঘিরে গড়ে ওঠেছিলো বিশাল অপরাধ স¤্রাজ্য। ইসলামে আছে যে এলাকায় যেনাবৃত্তি হয় সেখানে আল্লাহর গজব নেমে আসে। অন্যান্য ধর্মেও এটা নিষিদ্ধ। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার এমপি হওয়ার পরই নারায়ণগঞ্জকে পাপমুক্ত করার নিয়ত করেন। পবিত্র মক্কা শরীফে কাবা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়াদা করেন শামীম ওসমান যেকোন মুল্যে নারায়ণগঞ্জকে কলংকমুক্ত করবেন।
ফিরে এসে নারায়ণগঞ্জের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে টানবাজার পতিতা পল্লীর হাজার হাজার নির্যাতিতা নারীকে পূর্ণবাসনের ব্যাবস্থা করেন। সেসময় অনেক বাঁধা এসেছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে সকল বাঁধা অতিক্রম করে পূর্ণবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এজন্য সরকারীভাবে ২ কোটি টাকা এবং ব্যবসায়ী নেতা বড়ভাই সেলিম ওসমান ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে আরও ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন।
প্রায় দুই যুগ পর আবারও পবিত্র মক্কা শরীফে কাবা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে শপথ করেন শামীম ওসমান। এবার নারায়ণগঞ্জকে মাদকমুক্ত করার ঘোষনা দেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমান বলেন, মাদক হচ্ছে সকল অপরাধের মূল। যে পরিবারে একজন মাদকসেবী আছে, সেই পরিবারটি জাহান্নামে পরিণত হয়। মাদক যে সেবন করে সে অসুস্থ্য আর যে মাদক বিক্রি করে সে হচ্ছে ইবলিশ শয়তান। এবারের নির্বাচনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি জয়লাভ করান তাহলে সবাইকে নিয়ে মাদক ও অপরাধমুক্ত একটি ক্লিন নারায়নগঞ্জ প্রতিষ্ঠা করবো। প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদেও সাথে মতবিনিময় করতে এসে একই প্রত্যয় ব্যক্ত করে ভালো সাংবাদিকদের সহযোগীতা চান শামীম ওসমান। ৭ জানুয়ারী নির্বাচনে জয়লাভের পর মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে প্রতি ওয়ার্ডে ‘প্রত্যাশা’ নামে সংগঠনের কমিটি করার আহবান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনের প্রতিটি ওয়ার্ডে এক হাজার জনের কমিটি হবে। সব মিলিয়ে ৯০ হাজার লোক হবে। এদের যদি ৫ জন করে পরিবার সদস্য থাকে তাহলে সাড়ে ৪ লাখ লোক হবে। লোক আরও বাড়বে। আর এই সাড়ে ৪ লাখ লোক ইচ্ছে করলে নারায়ণগঞ্জ মাদকমুক্ত হতে বাধ্য।
২৭ জানুয়ারী (শনিবার) সেই প্রত্যাশা সংগঠনের উদ্যোগে ওসমানী ষ্টেডিয়ামে বিশাল প্যান্ডেল করে নারায়ণগঞ্জের সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। সেখানে দাওয়াত করা হয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের। এমপি শামীম ওসমান স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়ে দাওয়াত করা হয় সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আলেম-ওলামা, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, সাংবাদিক, আইনজীবী, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক মন্ডলীসহ সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দকে। সম্পুর্ণ অরাজনৈতিক এবং নারায়ণগঞ্জকে ক্লীন নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠার এই আহ্বানে সাড়া দেন সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ। প্রায় ২৫ হাজার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ দুপুরের পর জড়ো হন ওসমানী ষ্টেডিয়ামে। শুধু জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে কেউ এই মতবিনিময় সভায় আসেননি। যা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন প্রায় সকল নেতৃবৃন্দ। বক্তারা তীব্র সমালোচনা করে জবাব চান এমপি শামীম ওসমানের কাছে।
জবাবে শামীম ওসমান বলেন, আজকে এখানে নারায়ণগঞ্জের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছেন। তাদের একটাই চাওয়া। আর তা হলো ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচানো। মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, ইভটিজিং, ভূমিদস্যুতা আমাদের সমাজকে শেষ করে দিচ্ছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এসব নির্মুলে এগিয়ে না এলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম শেষ হয়ে যাবে। আমি আগেও বলেছি এখানে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। আগামীতে আমি এমপি নির্বাচন নাও করতে পারি। আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলে আরও পরে এমন উদ্যোগ নিতে পারতাম। আমার এখানে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। শুধু মাত্র মানুষকে ভালো রাখার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে খুশী করার জন্যই এই উদ্যোগ। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে নারায়ণগঞ্জ মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, ইভটিজিং, ভূমিদস্যুতামুক্ত হতে বাধ্য। কেউ আসুক বা না আসুক আমাদের নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর করতে আমাদেরই কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক বিরোধের সুযোগ নিয়ে যারা ফায়দা লুটার ছেষ্টা করছে তাদের সম্পর্কে যা বলার আমার মাননীয় প্রধাণমন্ত্রীর কাছে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলবো।
সমাবেশে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দন শীল বলেন, শামীম ওসমান যা বলেন, তা করেই ছাড়েন। এরআগে ২০০ বছরের কলংক টানবাজার পতিতা পল্লী উচ্ছেদ করতে গেলে অনেক বাঁধা বিপত্তি এসেছে। তিনি টলে যাননি। আজকে যারা এখানে এসেছে তারাই নারায়ণগঞ্জের সবকিছু। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের পিছু হটাতে পারবেনা।
নারায়নগঞ্জ চেম্বারের পরিচালক ইমতিনান ওসমান অয়ন বলেন, আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আপনারা মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী নির্মুলের এই সমাবেশে এসে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এই আয়োজন করায় আমার বাবাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে এই উদ্যোগটি আরো ২/৩ বছর আগে নিলে আজকে মাদকের ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখতে হতোনা। এখানে যারা উপস্থিত আছেন সবাই আমার মুরুব্বী। আপনারা নির্দেশ দিবেন, যতটুকু দায়িত্ব পালন করতে হয় যুব সমাজ ছাত্র সমাজ করতে প্রস্তুত আছে।
স্থানীয়রা মনে করেন, ক্লীন নারায়ণগঞ্জ প্রতিষ্ঠায় শামীম ওসমান যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি শুধু শামীম ওসমান না, নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি মানুষের মনের চাওয়া। আর এ চাওয়া পূরণে বর্তমান প্রশাসন এগিয়ে না এলে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের অবস্থান কি হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে। তবে কোন কিছুতেই পিছু হটাতে পারবে না শামীম ওসমানকে। ‘প্রত্যাশা’ শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশার প্রতিফলন। মাদকের ভয়াবহতা সকল অপরাধের মূল। এর মুলোৎপাটন করে ক্লীন নারায়ণগঞ্জ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। এই উদ্যোগ সফল হলে সারাদেশে মাদকমুক্ত নারায়ণগঞ্জ ‘মডেল’ হিসেবে পরিগণিত হবে। ইতিহাস স্বাক্ষী, রাজনীতিতে যেমন সারা দেশকে পথ দেখায় নারায়ণগঞ্জ। তেমনি মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে অপরাধমুক্ত শান্তিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ উপহার দিয়ে সারাদেশে মাইলফলক হবে ‘নারায়ণগঞ্জ’।
