নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক ইলিয়াস হত্যা মামলার প্রধান আসামি তুষার জেলা কারাগারে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে এ ঘটনা ঘটে। তবে বিষয়টি বুধবার সকালে প্রকাশ্যে আসে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলা সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সাংবাদিক ইলিয়াস হত্যা মামলার প্রধান আসামি তুষার কারাগারে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় লকাব বন্দি করার কিছুক্ষণ আগে সে অন্য দিকে চলে যায়। এ সময় ৬ তলা নতুন ভবনে পাহারা ছিল, কিন্তু তারা লকাবে তদারকিতে ছিল। এর মাঝে সে ওই ভবনের ছয় তলার একটি কক্ষের দরজার গ্রিলের সাথে নিজের গায়ের চাঁদর ছিঁড়ে গলায় ফাঁস দেয়। পরে তাকে খোঁজাখোঁজি করে কয়েদীরা ও ডিউটিরত সদস্যরা দেখে সে ঘোঙাছিল। পরে তাকে দ্রুত সেখান থেকে নামিয়ে শহরের জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল) নিয়ে গেলে ৩০ মিনিট পর তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরও বলেন, এই মামলায় সে ২০২০ সাল থেকে কারাগারে ছিলেন। তার সাথে অন্য আসামিরা জামিনে বেরিয়ে গেছেন। এমনকি তার আরেক ভাই জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তবে সাংবাদিক হত্যার ঘটনা সে সরাসরি জড়িত ছিল। ঘটনার পরে স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। সেই ইতোমধ্যে দোষ স্বীকার করেছে। তার মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণও সম্পন্ন হয়েছিল। সে কারণে হয়তো সে বুঝতে পারছিল খুব শিঘ্রই তাকে বড় ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে, এ ধরনের চিন্তা বা হতাশা থেকে হয়তো এ কাজ করে থাকতে পারে। তবে কারাগারে থাকাকালীন সময়ে সে খুব ভালো ব্যবহার করতো। তিনি কারাগারে ৫ ওয়াক্ত নামাজ্ পড়তেন, এমনকি তাহাজ্জুদ নামাজও বাদ দিতেন না। আর সকলের কাছে তিনি দোয়া চাইতেন এই বলে যে, আমার না জানি কি না কি হয়ে যায়, তোরা সবাই আমার জন্য দোয়া করিস।
তিনি আরও বলেন, তুষারের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতারের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তার স্বজনদের কাছে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবীরের আদালতে দৈনিক বিজয় পত্রিকার বন্দর উপজেলা প্রতিনিধি ইলিয়াস হোসেন খুনের ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন মামলার প্রধান আসামি তুষার।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর রাতে বাসায় যাওয়ার পথে উপজেলার আদমপুর এলাকায় পূর্ব বিরোধের জেরে আসামি তুষার সহ তার লোকজন মিলে সাংবাদিক ইলিয়াসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন রাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তুষারকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ধারালো ছুরিও উদ্ধার করা হয়। পরে জিওধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিন্নাত আলী ও মিসির আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত ইলিয়াসের স্ত্রী ৮ জনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় আত্মহত্যা করা তুষার (২৮) সহ মিন্নাত আলী (৬০) মিসির আলী (৫৩), হাসনাত আহমেদ তুর্জয় (২৪), মাসুদ (৩৬), সাগর (২৬), পাভেল (২৫) ও হযরত আলীকে (৫০)।
সেসময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার তৎকালীন পরিদর্শক আজগর হোসেন বলেছিলেন, আদালতে তুষার সাংবাদিক ইলিয়াসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন। আমাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুষার জানিয়েছেন, পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে তিনি ইলিয়াসকে হত্যা করেন। একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস ছিল সাংবাদিক ইলিয়াস ও তুষারদের।