নারায়ণগঞ্জসহ দেশজুড়ে বয়ে চলা তাপপ্রবাহে অতিষ্ট জনজীবন। প্রচন্ড গরমে জনজীবন করছে হাঁসফাঁস। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রখর রোদে পথঘাট সব কিছুই উত্তপ্ত। গরমের কারণে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি। এরইমধ্যে সম্প্রতি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকারী দুটি প্রতিষ্ঠান কতৃক নির্বিচারে কাটা হয়েছে কয়েকশ গাছ। এনিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ কোন কাজে আসেনি। এছাড়া বন্দরে শীতলক্ষা নদীর তীরের বিপুল সংখক গাছ কেটে নেয়া হয়েছে রাতের অন্ধকারে।
জানা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নারায়ণগঞ্জ শহরের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে কয়েক ডজন গাছ কেটে ফেলেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নির্বিচারে গাছ কাটার এই কার্যক্রমকে ‘গণহত্যার’ সঙ্গে তুলনা করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা। তারপরও বন্ধ হয়নি বৃক্ষ নিধন।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। সেখানে থাকবে আধুনিক রেস্ট হাউস, পার্কিং প্লেস। এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের জন্য গাছ কাটা হচ্ছে।
অপরদিকে কয়েকমাস আগে বন্দরের মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের দুই পাশে বড় বড় গাছ কাটা হয়েছে রাস্তার কাজের জন্য। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ সড়কটির দুপাশে বিপুল পরিমান গাছ থাকায় ছায়াঘেরা পরিবেশ ছিলো। তা আর এখন নেই। রাস্তার উন্নয়নকাজের পর পুনরায় সড়কের দুপাশে আগের মতো গাছ লাগানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বর্তমানে এসব এলাকায় তীব্র দাবদাহ চলছে। গরমে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী গাছ কাটার ফল হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
এব্যাপারে পরিবেশবাদী সংগঠনের সুজিত সরকার বলেন, উন্নয়নকাজ প্রয়োজন আছে। তাই বলে এভাবে নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এভাবে গাছ না কেটেও উন্নয়নকাজ করা যেতো। কিন্তু কে শুনে কার কথা। এখন তীব্র গরমে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান জানান, প্রচন্ড গরম, হিট ষ্ট্রোকের একটা প্রকোপ আছে তাই শহরবাসী অবশ্যই ঢিলেঢালা সাদা কাপড় পরিধান করবে, পর্যাপ্ত পানি খাবে এবং বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাবেনা।
বন্দরের বাসিন্দা অনিক হোসেন বলেন, মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের দুপাশে বিপুল পরিমান গাছ ছিলো। ছায়াঘেরা সড়কে ঠান্ডা পরিবেশ বিরাজ করতো। রাস্তার উন্নয়নের জন্য সবগুলো গাছ কেটে ফেলা হলো কয়েকমাস আগে। এই গরমে যদি রাস্তার দুইপাশে গাছ থাকতো বন্দরবাসীর কতোই না উপকার হতো। এখন রাস্তায় দাড়ানো মুসকিল হয়ে পরেছে গরমের কারনে। শুধু বাতাস বা অক্সিজেন এর কথা বলছি না সড়ক দুর্ঘটনায় কত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। দুইপাশে গাছগুলো থাকলে তো এরকম টা না ও হতে পারতো। উপজেলা নির্বাচনে অনেকে অনেক টাকা ডানে বামে এইজন সেইজনের পিছনে খরচ করছেন। আর এই রাস্তাটা তো উপজেলার মধ্যেই পরেছে। আমরা কি পারিনা ১১জন প্রার্থী আছি ২০০ করে বৃক্ষরোপন করতে?
এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন পাঠান বলেন, নদীর পাড়ে এই এলাকায় একটি টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের কারণে কিছু গাছ কাটতে হয়েছে। গাছগুলো বিআইডব্লিউটিএ’র জমিতেই ছিল। নিয়ম মেনে আমরা বন বিভাগ ও বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি নিয়ে গাছ কেটেছি।