নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে সিলযুক্ত ব্যালট প্রকাশ্যে প্রদর্শন ও এর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। আজ সোমবার সকালে মোগড়াপাড়া এইচ জি জি এস সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
ওই নেতার নাম সোহাগ রনি। তিনি সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি। ২০২২ সালের ১৫ জুন সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফ মাসুদের কাছে পরাজিত হন সোহাগ রনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে উপজেলার সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল হোসেনের আনারস প্রতীকে প্রকাশ্যে ভোট দিয়ে সিলযুক্ত সেই ব্যালট পেপার প্রদর্শন করেন সোহাগ। পরে সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে সেই ব্যালটের ছবি তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেন। ওই পোস্টে সোহাগ লিখেছেন, ‘ইনশাল্লাহ্ জয় আমাদের আসবেই’।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সোহাগ রনি বলেন, প্রার্থীকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে প্রকাশ্যে সিল দেওয়া ব্যালট দেখিয়েছেন।
সোনারগাঁ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম (ঘোড়া প্রতীক), উপজেলার সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন ওমর (আনারস প্রতীক), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম (মোটরসাইকেল প্রতীক) ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী হায়দার (দোয়াত-কলম প্রতীক)।
আইনের বিষয় আমি জানি না। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রকাশ্যে সিল মেরে ব্যালট প্রদর্শন করেছি। তিনি শুধু নন, আরও অনেকে প্রকাশ্যে সিল দেওয়া ব্যালট প্রদর্শন করেছে। তাদেরও কিছু হয়নি। আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা প্যাঁচ ধরলে আমরা কিছু করতে পারমু না?
সোহাগ রনি
তবে প্রকাশ্যে ব্যালট প্রদর্শনকে আইনের লঙ্ঘন বলছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বি। তিনি বলেন, এটা করা যাবে না। কেউ এমন কিছু করে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের আইনের লঙ্ঘনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সোহাগ রনি বলেন, ‘আইনের বিষয় আমি জানি না। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রকাশ্যে সিল মেরে ব্যালট প্রদর্শন করেছি। তিনি শুধু নন, আরও অনেকে প্রকাশ্যে সিল দেওয়া ব্যালট প্রদর্শন করেছে। তাদেরও কিছু হয়নি। আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা প্যাঁচ ধরলে আমরা কিছু করতে পারমু না?’
নির্বাচনের কমিশনের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩–এর ৭৮ ধারায় বলা হয়েছে, ব্যালটের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতার শাস্তি—‘কোনো রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার বা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত কোনো প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট বা পোলিং এজেন্ট বা ভোট গণনাকারী উপস্থিত ব্যক্তির অন্যূন ছয় মাস বা অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন। (ক) ভোটের গোপনীয় রক্ষা করিতে বা রক্ষা করার জন্য সহায়তায় ব্যর্থ হন। (খ) কোনো আইনানুগ উদ্দেশ্য ব্যতীত, ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পূর্বে অফিশিয়াল সিলমোহর সম্পর্কে কোনো তথ্য কোনো ব্যক্তিকে প্রদান, (গ) কোনো নির্দিষ্ট ব্যালট পেপার দ্বারা কোনো প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হয়েছে তা সম্পর্কে ভোট গণনাতে প্রাপ্ত কোনো তথ্য প্রদান করেন।’