নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে ‘দুলাভাই’ সম্মোধন করে লাঙ্গল প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণায় আসার আহবান জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান। এমনকি তার সাথে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এই সংসদ সদস্য। তবে তাতেও মন গলেনি ‘দুলাভাই’ আনোয়ার হোসেনে। শ্যালকের মধুর ডাকে সাড়া দেননি এই নেতা। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বন্দর সমরক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ কে এম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী জনসভায় তাকে দেখা যায়নি। অথচ নারায়ণগঞ্জ শহর ঢিঙিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলায় গিয়ে ওই আসনের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় তাকে দেখা গেছে। ফলে কার্যত অর্থে, সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ডাকে সাড়া দেয়নি দুলাভাই আনোয়ার হোসেন।
প্রসঙ্গত, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তবে আওয়ামী লীগের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি ছাড় দেওয়া হয়। এতে মনক্ষুন্ন হয়ে ব্যাকফুটে চলে যান আনোয়ার হোসেন। তিনি প্রকাশ্য কিছু না বললেও, আওয়ামী লীগের শরীক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষে মাঠে নামেনি।
এদিকে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সদর থানা সংলগ্ন প্রধান নির্বাচনী কেন্দ্রে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান আনোয়ার হোসেনকে দুলাভাই বলে সম্মোধন করে তাকে আসার আহবান জানান।
ওই সভায় তিনি বলেন, মঙ্গলবার বন্দরে সমরক্ষেত্রে একটি মিটিং করবো, সেখানে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সকল সদস্যদের দাওয়াত করবে। যেখানে শুধু আওয়ামী লীগের নেতারাই বক্তব্য দিবে। আমি একটা মানুষকে দুলাভাই বলে ডাকি, আমার কোন বড় বোন নাই তবুও দুলাভাই বলে ডাকি। আজকে দুলাভাইয়ের সাথে অনেক্ষণ কথা হইছে। আমার বাবা আমাদের রাজনীতি করার জন্য ওই মানুষের কাছে তুলে দিলেন, আর শামীম ওসমানকে তুলে দিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। আর আমাকে তুলে দিলেন আমাদের রাজনৈতিক গুরু আনোয়ার হোসেনের কাছে। আমি ৭০ থেকে ৭৪ পর্যন্ত ছাত্রলীগ করেছি আনোয়ার হোসেনের সাথে। সেখান থেকেই আমি উনাকে আমার রাজনৈতিক গুরু মনে করি। আমি আশাবাদি আনোয়ার ভাই রাগ করে থাকবেন না, একটা ভুল বোঝাবুঝি হইছে।
সেলিম ওসমান বলেন, এবার আনোয়ার ভাই, খোকন সাহা, চন্দনশীল যেমন কষ্ট পেয়েছেন আমিও ঠিক তেমন কষ্ট পেয়েছি। কারণ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে কাউকে নৌকায় মনোনীত করা হয় নাই। আমি এবার আপার কাছে নৌকায় নির্বাচন করার আবদার করেছি। কিন্তু আপা আমার জন্য আসন ছেড়ে দিলেন।
অথচ সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের এমন আহবানের পরও ডাকে সাড়া দেয়নি দুলাভাই আনোয়ার হোসেন। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বন্দর সমরক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ কে এম সেলিম ওসমানের নির্বাচনী জনসভায় তাকে দেখা যায়নি। সেখানে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন রাজনীতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে আনোয়ার হোসেনকে দেখা যায়নি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহানগরের সভাপতি আনোয়ারে হোসেনের একটি ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই ছবিতে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে মন্ত্রী গাজীর পাশে দাঁড়িয়ে নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এতে অনেকে মন্তব্য করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনটি ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের শরীক দলের প্রার্থী হিসেবে সেলিম ওসমানের পক্ষে সবাই কাজ করবে। তবে বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন শহরের গন্ডি পেরিয়ে সেই সুদুর রূপগঞ্জ উপজেলায় (নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে) গিয়ে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। অথচ পাশের আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। এতে নানা প্রশ্ন উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে শ্যালক ও দুলাভাইয়ের মধ্যে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অথচ এর আগে, ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ে তাদের মধ্যে বেশ মধুর সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাদের কে এক সাথে দেখা গেছে। ওই সময়ে সেলিম ওসমান তাকে গুরু বলে সম্মোধন করতেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন তাকে দুলাভাই বলে সম্মোধন করেও মন গলাতে পারেনি।