‘রাতে আমার ছেলে হঠাৎ করে ভিডিও কল দিয়েছে। এমনিতে সে সচরাচর আমাকে ভিডিও কল দেয় না, অডিও কল দেয়। ভিডিও কলে সে আমাকে জিজ্ঞেস করে আম্মু কি খেয়েছো। ফাহিমকে ঠিক মত পড়াশোনা করাইয়। এসব বলে সবার খোঁজখবর নিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে ছোট ছেলের কাছে শুনি আমার ছেলে শান্তর প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে।এরপর তার মৃত্যুর খবর পাই। এখন আমাকে আম্মু বলে কে ডাকবে। ও শান্ত রে। আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো।’
রাজধানীর বেইলি রোডের আগুনে প্রাণ হারানো নারায়ণগঞ্জের শান্ত হোসেনের মা লিপি আক্তার আহাজারি করে এ কথাগুলো বলছিলেন। শান্ত হোসেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ভূঁইগড় পশ্চিমপাড়া এলাকার মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে।
তিনি বলেন, শবেবরাতের আগে একদিন ফোন করে শবেবরাতের রাতে বাসায় এসে সবার সাথে নামাজ পড়বে বলে জানায়। এই অল্প সময়ের জন্য বাসায় আসতে আমি নিষেধ করেছি। এরপরও সে শবেবরাতের রাতে এসে এখানে নামাজ পরেছে। পরের দিন সকালে চলে গেছে। এটাই ছিল শেষ দেখা।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে এক মাস পর পর ছুটিতে বাড়িতে আসতো। কিন্তু গত দুই মাস ধরে সে বাড়িতে আসেনি। ছেলে বলেছেন, ওর সাথের অফিসার চার জন ছুটিতে গেছে। ওরা ফিরে এলে রমজানের আগে বেশিদিন ছুটি কাটিয়ে যাবে বলেছিল। রমজানের আগে ছুটিতে আমার ছেলের আর আসা হলোনা। লাশ হয়ে ফিরল।
পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে শান্ত চাকরিতে যোগ করেছে উল্লেখ করে লিপি আক্তার বলেন, আমার ছেলে সবসময় হাসি-খুশি থাকতো। পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে চাকরিতে যোগ দেয়। তার বাবার পাশাপাশি সে সংসারের খরচ যোগাত। ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ বহন করতো। আমার ছেলে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো। আমাকে কে স্বপ্ন দেখাবে। তার বাবাও শেষবারের মতো ছেলেকে দেখার সুযোগ পেলো না।
শুক্রবার শান্তর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে লাশ ঘিরে স্বজনরা কান্না ও আহাজারি করেছিল। এতে পুরো এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। পরে শান্তর জানাযার নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
জানা গেছে, শান্ত হোসেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ভূঁইগড় পশ্চিমপাড়া এলাকার মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি বেইলি রোডে গ্রিন কজি কটেজ ভবনের অথেল বার অ্যান্ড জুস নামের একটি রেস্তোরাঁয় গত ৭ মাস ধরে সহকারী সেফ হিসেবে চাকরি করতেন। তারা দুই ভাই এক বোন। বাবা সৌদি আরব থাকেন। তবে তিনি বিদেশে তেমন সুবিধে করতে না পারায় পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে শান্তই সংসারের খরচ বহন করতেন। এ কারণে তিনি উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি।
শান্তর ভাই প্রান্ত হোসেন বলেন, রাতে মোবাইলে দেখি ঢাকার বেইলি রোডে আগুন লেগেছে। তখনই আমার মনে নাড়া দেয়, আমার বড় ভাই তো সেখানে চাকরি করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ের মোবাইলে কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। পরে তার এক সহকর্মীকে ফোন দিলে পুলিশ ধরে বলে মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন।