নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ, জাপা ও তৃণমূল বিএনপি সহ এক হালি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছে । সব মিলিয়ে কাগজে কলমে ৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে ভোটের ময়দানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার এবং স্বতন্ত্র হিসেবে শাহাজাহান ভূঁইয়ার লড়াই হবে। আর তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আলোচনায় রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম। তবে ত্রিমুখী লড়াইয়ের ফলে এই আসনে কঠিন সমীকরণ তৈরি হয়েছে।
টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। চতুর্থবারের মত নির্বাচনে জয় পেয়ে এবোরে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। বিএনপি দল থেকে বহিষ্কৃত ও দলটির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার এবার প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। তবে ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে অংশগ্রহণ করে তিনি পরাজিত হয়েছেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপির দায়িত্বে থাকা এই নেতা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছেন। আর উপজেলা পরিষদের তিন বারের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূইয়া এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কেটলি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ৯ জন প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, তৃণমূল বিএনপি থেকে দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ পেয়েছেন দলটির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার, স্বতন্ত্র হিসেবে কেটলি প্রতীক পেয়েছেন শাহাজাহান ভূঁইয়া, স্বতন্ত্র হিসেবে ঈগল প্রতীক পেয়েছেন গাজী গোলাম মর্তুজা, স্বতন্ত্র হিসেবে আলমিরা প্রতীক পেয়েছেন হাবিবুর রহমান, জাকের পার্টি থেকে গোলাপ ফুল প্রতীক পেয়েছেন মো. জোবায়ের আলম, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল পেয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক পেয়েছেন মো. জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে দলীয় প্রতীক চেয়ার পেয়েছেন এ কে এম শহিদুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গাজী গোলাম মর্তুজা ও হাবিবুর রহমান মন্ত্রী গাজীর পক্ষে কাজ করছেন ও ভোট চাইছেন। এবারের নির্বাচন মন্ত্রী গাজীর জন্য কঠিন সমীকরণ তৈরি করেছে। মূলত দলের হাইকমাণ্ড থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই মন্ত্রী গাজী ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন তিন বারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূইয়া। তিনি এবার মন্ত্রী গাজীর ঘোর বিরোধীতা করে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। এই দুই প্রার্থীর বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগের ভোট দুভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এতে তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার ও তার সমর্থকরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। বেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এই প্রার্থী। এছাড়া আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটগুলো তার বাক্সে পড়বে বলে বেশ আশাবাদী এই প্রার্থীর সমর্থকরা। আর বিএনপি দলটি এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় এই প্রার্থী সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভোট টানতে চাইছেন। ফলে তৈমূর আলম খন্দকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূইয়ার মুখে প্রায় সময় মন্ত্রী গাজী বিরোধী বক্তব্য প্রকাশ পাচ্ছে। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম আলোচনায় থাকলেও এখনো সেভাবে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে পারেন নি। তবে এই নেতাও আওয়ামী লীগের ভোট কাটবে। আর তাতে কিছুটা হলেও লাভবান হতে পারেন তৃণমূল বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার।
তবে স্থানীয় ভোটাররা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, এবারের নির্বাচনে মন্ত্রী গাজী ও শাহজাহান ভূইয়ার মধ্যে হাড্ডহাডিড লড়াই হবে। আর তৈমুর আলম খন্দকার নতুন দলে যোগদান করে এখনো সেভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। তার দলের তেমন কোন কর্মী সমর্থক রূপগঞ্জে নেই। ফলে আসন্ন নির্বাচনে তিনি বেশ পিছিয়ে রয়েছেন।
অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপির কর্মী -সমর্থকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ বিরোধী ও বিএনপি দলটির একচেটিয়ে ভোট পড়বে তৈমুরের বাক্সে। ফলে নির্বাচনে তিনি নিরব ভোট পাবেন বলে আশাবাদী কর্ম-সমর্থকরা। তাছাড়া ক্লিন ইমেজের কারণে বাকি প্রার্থীদের তুলনায় তিনি বেশ এগিয়ে আছেন।
উল্লেখ্য, এই আসনে মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ জন ভোটার রয়েছেন। সাতটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার ১২৮টি কেন্দ্রের ৮১৭টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।