আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবাই ভোট কেন্দ্রে যাবেন, ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান। ২০০৯ থেকে ২০২৩ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আজকে আমরা ২০২৪-এ পা দিয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশে এত উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার ৪ (জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ইসদাইর এলাকায় এ কে এম শামসুজ্জোহা স্টেডিয়ামে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক চক্রান্ত হয়েছিল। নির্বাচন যাতে না হয়, সেই চক্রান্ত এখনও চলছে। যেহেতু নিজেরা নির্বাচন করে জিততে পারবে না, তারা দেশের মানুষকে বঞ্চিত করতে চায় ভোটের অধিকার থেকে। মিলিটারি ডিকটেটররা যখন একে একে ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন আবার তারা সেই একই কাজ করতে চায়। আমরা বলেছি নির্বাচন হবে।’
আরো পড়ুন: ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা: প্রধানমন্ত্রী
ভোটের অধিকার রক্ষায় সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে ৪ তারিখ। ৭ তারিখে নির্বাচন। আমি দেশের সবাইকে অনুরোধ করবো, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ভোটের অধিকার আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার মিলিটারি ডিকটেটররা কেড়ে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করেছিল। এই আমরা আওয়ামী লীগ সেখান থেকে জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, প্রতি রাতে কার্ফিউ অবস্থা– সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
স্মার্ট জনশক্তি গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই মর্যাদা ধরে রেখে আমরা ২০৪১ সালের বাংলাদেশ।এই বাংলাদেশ তরুণ সমাজ শিক্ষায়- দিক্ষায় প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ জনশক্তিতে গড়ে উঠবে। আমাদের স্মার্ট জনশক্তি আমাদের স্মার্ট সরকার স্মার্ট ইকোনমি স্মার্ট সোসাইটি আমরা গড়ে তুলবো। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।
নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কা আমাদের মার্কা। নৌকা হচ্ছে নূহ নবীর নৌকা মহাপ্লাবনে মানব জাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকা আজকে উন্নয়ন দিয়েছে। এই নৌকা আগামীকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীদের আপনারা জয়যুক্ত করবেন। আপনাদের কাছে সেই আহবান জানাই। অবশ্য নৌকায় লাঙ্গল চড়ে বসছে।
আরো পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর আগমনে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত জনসভা
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি নির্বাচনে আসেন নাই, এটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকারে বাধা দেওয়া এটা জনগণ কোনভাবেই মেনে নেবেনা।
নারায়ণগঞ্জ জেলায় তিনটি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। গত ১৫ বছরে অনেক উন্নয়ন করেছি। শীতলক্ষ্যা সেতুর উপর দিয়ে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা নাসিম ওসমান সেতু হয়েছে। গাজী সেতু, সুলতানা কামাল সেতু, মেঘনা সেতু, গোমতী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া শামসুজ্জোহা সড়ক লিংক রোড সেটা ৬ লেনে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন সড়ক হয়েছে। পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত মহাসড়ক আট লেনে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেন বিশিষ্ট ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া আমরা ঢাকায় মেট্রোরেল চালু করেছি। মেট্রোরেল নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে তিনটি মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এমআরটি লাইন -২, এমআরটি লাইন-৪ ও এমআরটি লাইন-১। এগুলো সবই নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে যাবে।
উন্নয়নের যাত্রা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ ধরে রাখতে পারবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নের যাত্রা একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ ধরে রাখতে পারবেনা। কারণ দেখেছি ওই বিএনপি একবার ক্ষমতায় এসে যতটুকু উন্নতি করেছিলাম ধ্বংস করেছে। আর কেউ এ দেশের উন্নতি করবেও না, মন দিয়ে করবে না।
খাদ্যের চাহিদা মেটানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার যতটুকু জমি আছে উৎপাদন করবেন। আমাদের খাদ্যের অবস্থান আমাদের করতে হবে। কেউ এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখবেন না।
জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ -১ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ -২ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ -৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সহ প্রমুখ।